আগ্নেয়গিরির উপর বসে আজকের বাংলাদেশওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে আক্রমণের শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু শ্রেণির মানুষ ও সংবামাধ্যম। হাদির মৃত্যুর তিন দিন পরে ঢাকা যেন ঝড়ের আগের মুহূর্তের জন্য অপেক্ষারত একটি শহর। প্রথম পলকে ঢাকাকে শান্ত লাগলেও, আদতে এই শান্ত শহরের সঙ্গে মিশে রয়েছে চরম ভীতি ও অনিশ্চয়তা। রাস্তা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস , এমনকি মিডিয়া অফিসগুলিতেও ভয়ের পরিবেশ বিরাজমান।
জগন্নাথ হলের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীরা ভীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত জগন্নাথ হলে প্রচুর সংখ্যক হিন্দু এবং অন্য সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী বাস করে। হাদির মৃত্যুর পর যে তাণ্ডবলীলা চালানো হয়, তার জেরে সবচেয়ে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে জগন্নাথ হলে। কারণ জুলাই'২৪ এর সময়ে এই এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি হামলা, অশান্তি ও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছিল।
এরপর সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমন যে, শীতের ছুটি শুরু হতেই জগন্নাথ হলের পড়ুয়ারা হস্টেলের মূল গেটে তিনটি তালা আটকে নিজেদেরই বন্দি করে ফেলেছে। হস্টেলের ভিতরে পড়ুয়ারা পড়াশোনা করছে, খেলাধূলাও করছে ঠিকই, কিন্তু নিতান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হচ্ছে না। ভয় এতটাই তীব্র যে কোনও ছাত্র ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি নয়। বিশেষ করে দীপু দাসের ঘটনার পর বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ যেন আরও বেশি আতঙ্কিত।
ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোকে টার্গেট করা হয়
১৮ ডিসেম্বর রাত ১১:৫৫ মিনিটে হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই জনতা রাস্তায় নেমে আসে এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে নামি সংবাদমাধ্যমগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রথম আলোর মূল অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যার জেরে অফিসটি পুরো পুড়ে যায়। পোড়া ম্যাগাজিন, ছাই এবং ভাঙা কাঁচ আজও অফিসের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
ডেইলি স্টার অফিসও একইভাবে ধ্বংস করা হয়। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের চিহ্ন এখনও অফিস জুড়ে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্ত্বেও, ঢাকা কিন্তু এখনও যথেষ্ট সংবেদনশীল।
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র 'ছায়ানাট'ও তাণ্ডবের হাত থেকে রক্ষা পায়নি
ঢাকার অন্যতম নামি সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীত কেন্দ্র ছায়ানটও ক্রোধন্মত্ত জনতার আক্রমণের শিকার হয়েছে। ঘটনার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এলাকায় কড়া নজরদারি চালাচ্ছে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
রাগে অন্ধ জনতা স্পষ্ট করে দিয়েছে, তাদের টার্গেট শুধুমাত্র সংখ্যালঘু নয় বরং স্বাধীন গণমাধ্যমও ক্রোধন্মত্ত জনতার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর মতো প্রতিষ্ঠানের উপর হামলা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। পরিস্থিতি এমন যে কেউ জানে না কখন, কোথায় এবং কী ঘটে যেতে পারে। ফলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ এখন কার্যত আগ্নেয়গিরির উপর বসে আছে, যে কোনও মুহূর্তে তাতে বিস্ফোরণ হতে পারে।