Bangladesh Election: 'এত দেরি কেন?' এপ্রিলে ভোট ঘোষণা করতেই ইউনূসে ক্ষুব্ধ BNP, CPB

শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। সেখানে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। তবে এই ঘোষণায় এখনও নির্দিষ্ট কোনও তারিখ জানানো হয়নি।

Advertisement
'এত দেরি কেন?' এপ্রিলে ভোট ঘোষণা করতেই ইউনূসে ক্ষুব্ধ BNP, CPB
হাইলাইটস
  • শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস।
  • ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে।
  • বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি), ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনের দাবি করেছিল।

শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। সেখানে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। তবে এই ঘোষণায় এখনও নির্দিষ্ট কোনও তারিখ জানানো হয়নি। বহু রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি), ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনের দাবি করেছিল। ইউনূসের ঘোষণায় ভোটের দাবিতে অশান্তি কিছুটা কমেছে। তবে অনিশ্চয়তা পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, এমনটাও বলা যায় না।

ঢাকার সংবাদপত্র প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ডিসেম্বরেই ভোট চেয়েছিল। অন্যদিকে, ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) জানায়, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে এপ্রিল মাসেও ভোট গ্রহণে তাদের আপত্তি নেই।

তবে ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেননি, কীভাবে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলবে আগামী কয়েক মাসে। তাঁর অনুপস্থিত রোডম্যাপ এবং প্রস্তুতির অভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা-ভিত্তিক মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দুর্বল নির্বাচনী আইন এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা ইউনূসের পক্ষে কঠিন হতে পারে।'

২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন। কিন্তু তাঁর শাসনকালে দেশজুড়ে বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা এবং অনিশ্চয়তা অব্যাহত থেকেছে। এই নির্বাচন ঘোষণার পরও রাজনৈতিক চাপ থেমে নেই।

পূর্ববর্তী বিবৃতিতে ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টারা বলেছিলেন, ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে যেকোনও সময় নির্বাচন হতে পারে। এখন এপ্রিল নির্ধারণ করায় হাতে রয়েছে প্রায় ৯ মাসের সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক স্তরে বহু রদবদল করতে হবে, যা সহজ কাজ নয়। বিশেষত যখন ছাত্র নেতাদের দ্বারা গঠিত এনসিপি নির্বাচন কমিশন থেকে 'বিএনপি ঘনিষ্ঠদের' সরানোর দাবি তুলেছে।

বিএনপি চাইছে, প্রথমে নির্বাচন হোক। তারা এখনই ভোট চাইছে, কারণ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বর্তমানে নিষিদ্ধ, আর এই মুহূর্তে জনসমর্থন বিএনপির দিকে। তারা আশঙ্কা করছে, সময় পেরোলে এই জোয়ার কমে যেতে পারে।

Advertisement

তবে এনসিপির পক্ষেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এনসিপি হয়তো 'রাজা’র দল' হয়ে উঠতে পারে। ছাত্র উপদেষ্টারা এখনো ইউনূস সরকারের অংশ হওয়ায় এই সংশয় আরও জোরাল।

৫ জুন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন পিছিয়ে দিতে নানা কৌশল নিচ্ছে। শুধু বিএনপি নয়, প্রায় ৫০টি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরেই ভোট চায় বলে জানিয়েছে ঢাকার দৈনিক যুগান্তর।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট চেয়েছেন। তাঁর মতে, দেশের নীতি নির্ধারণের জন্য একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।

চাপে পড়ে ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদ এবং এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামকে জানিয়েছিলেন, তিনি পদত্যাগ করতে চান। পরে তাঁকে পদে থাকার অনুরোধ করেন নেতারা।

এনসিপি-র পক্ষ থেকে শুক্রবার বলা হয়, 'যদি জুলাই সনদ, ঘোষণাপত্র ও সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়, তাহলে এপ্রিল মাসে নির্বাচন হলে আপত্তি নেই।' এই বক্তব্য দেন এনসিপি সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

তবে কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইউনূসের এপ্রিল মাসে নির্বাচন করানোর সিদ্ধান্তে হতাশ। সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, '২০২৫ সাল শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচিত সরকার দরকার। এপ্রিল কেন বেছে নেওয়া হল, সেটা আমাদের বোঝা যাচ্ছে না।'

প্রাক বর্ষার কালবৈশাখীর কারণে মার্চ-এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে নির্বাচন করানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া এই সময়ে দেশে পাবলিক পরীক্ষা চলে, ফলে অধিকাংশ শিক্ষক ব্যস্ত থাকেন, যার ফলে নির্বাচনী দায়িত্বে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ফলে মহম্মদ ইউনূসের এপ্রিল মাসের নির্বাচন ঘোষণা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পুরোপুরি মিটিয়ে দিতে পারেনি। বরং রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, তিনি কেবল সময় কিনছেন, ভোট এড়াতে।

POST A COMMENT
Advertisement