বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো আরো প্রায় চার-পাঁচ মাস বাকি। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইতিমধ্যেই নানা আসনে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। নিজ নিজ এলাকাতে আসন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া এসব প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। আর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ১০ বছর পর তিনি সরাসরি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে যাচ্ছেন, এমন ইঙ্গিত মিলেছে দলীয় সূত্রে।
বর্তমানে ৮১ বছরে পা দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র জানাচ্ছে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সফরের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি বুলেটপ্রুফ মিনিবাস জাপান থেকে আনা হচ্ছে। তার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গাড়িটিকে কাস্টম ডিজাইনে প্রস্তুত করা হচ্ছে। রোববার (৫ অক্টোবর) বিএনপির পক্ষ থেকে ওই গাড়িটির আমদানির অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্যও জাপান থেকে আরেকটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হবে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, এই মিনিবাসেই খালেদা জিয়া দেশজুড়ে নির্বাচনী সফরে অংশ নেবেন। তার সঙ্গে থাকবেন নিরাপত্তা আধিকারিক, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও সহকারী দল। সফরে বিভিন্ন জেলায় যাত্রাবিরতি ও জনসভায় যোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারেন বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। দলীয় সূত্র থেকে খবর, খালেদার সশরীরে প্রচারে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, তবে শারীরিক অসুবিধার কারণে যদি তা সম্ভব না হয়, প্রযুক্তির সহায়তায় খালেদা জিয়া প্রচারে অংশ নেবেন। বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজেই মাঠে থাকতে চান। তার মাঠে নামা মানেই কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণ ফিরে আসবে।
২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেওয়ার পর এবারই প্রথম খালেদা জিয়াকে পূর্ণমাত্রায় প্রচারে দেখা যাবে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রতিটি পদক্ষেপে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। দলীয় প্রচার কমিটি জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই খালেদা জিয়ার নির্বাচনী যাত্রার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হবে। প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনটি সংসদ নির্বাচনে প্রতিবারই পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবং সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেছেন। এরপর ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতেই জয়ী হন। নির্বাচনে খালেদা জিয়া কখনোই পরাজিত হননি।
জানা যাচ্ছে, সবকিছু ঠিক থাকলে বগুড়া ৬, বগুড়া ৭ এবং ফেনী ১ — এই তিনটি আসন থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন বেগম খালেদা জিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে আগামী নির্বাচনে এই তিনটি আসন থেকেই বেগম খালেদা জিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট অবিভক্ত ভারত বর্ষের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তির ছোট্ট শহরে বেগম জিয়ার জন্ম। পৃথিবীতে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা থেমেছে মাত্র। নাম রাখা হয় ‘শান্তি’। পরে তার পরিবার দিনাজপুরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।