এপার বাংলার মত দুর্গাপুজো নিয়ে মেতে উঠেছে ওপার বাংলাও। শোনা যাচ্ছে করোনা রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গতবছরের তুলনায় এবছর সেদেশে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ফলে বাংলাদেশ জুড়ে এবার মোট পুজো হচ্ছে ৩২ হাজার ১১৮টি। আর এরাজ্যের মতোই বাংলাদেশের পুজো কমিটিগুলিকে অনুদান দিয়েছে হাসিনা সরকার। এবার রাজধানী ঢাকাতেও পুজো হচ্ছে ২৩৮টি। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের দুর্গাপূজো বেশ নামকড়া। তবে দেশের সবচেয়ে বড় পুজোটা হয় বাংলাদেশের দক্ষিন পশ্চিমের জেলা বাগেরহাটের সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামে।
স্থানীয় ব্যাবসায়ী লিটন শিকদার গত দশ বছর ধরে শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সমগ্র দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। ২০১৮ সালে ৭০১ টি প্রতিমা দিয়ে পূজার আয়োজন করা হয়। এবং প্রতি বছরই প্রতিমার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। শিকদার বাড়ির পূজা নামে এটি এখন জনপ্রিয়। ২০১৯ সালে এখানে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৮০১টি। যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রতিমার দুর্গা পুজোর মণ্ডপ বলে দাবি করেছিলেন আয়োজক ও জেলা পুজো উদযাপন পরিষদের নেতারা।
এবার কেমন আয়োজন?
মহা ধুমধামে দুর্গা পুজো আয়োজন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ব্যবসায়ী লিটন শিকদার। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ থেকে এই মণ্ডপে পুজো দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা। তবে গতবার করোনা কালে শিকদার বাড়ির মণ্ডপে ছিল না দর্শনার্থীদের ভিড়। করোনার কারণে পূজা উদযাপিত হয় সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে সীমিত পরিসরে। ২০২০ সালে মণ্ডপে শুধু দুর্গার প্রতিমা তৈরি ছাড়া আর কোনও আয়োজন করা হয়নি। এ বছরও স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র জরুরী ধর্মীয় আচার রক্ষার্থে পুজোর আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। করোনা পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এবারের শিকদার বাড়ির পূজায় বাইরের দর্শনার্থীদের না আসার অনুরোধ করেছেন আয়োজকরা। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও বড় পরিসরে পুজো আয়োজনের কথা জানিয়েছেন অন্যতনম উদ্যোক্তা শিশির কুমার শিকদার।
২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম দুর্গাপুজোর জমকালো আয়োজন শুরু হয় শিকদার বাড়িতে। সেই থেকে প্রতি বছর ধুমধামে পুজো হয়ে আসছে এই বাড়িতে। ২০১৯ সালেও ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পুজো উদযাপিত হয়। তবে শিশিরবাবু জানিয়েছেন, ‘এ বছর সংক্ষিপ্ত পরিসরে পারিবারিকভাবে শুধু মা দুর্গার প্রতিমা স্থাপন করে পূজা-আর্চোনা করা হবে।’ শিকদার বাড়ির দূর্গা পূজার প্রধান প্রতিমা শিল্পী বিজয় ভাস্কর বলেন, ‘এ বছর প্রতিমা তৈরির জন্য খুবই অল্প সময় লেগেছে। কারণ এবছর শুধু দুর্গার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। তবে এ সময়ে আমরা শিকদার বাড়িকে সাজানোর জন্য অনেক কাজ করেছি। শিকদার বাড়ির পুকুর ঘাট, প্রবেশ ফটক ও ভবনের সামনে একটি আকর্ষনীয় ভাস্কর্য তৈরি করেছি আমরা।’
এদিকে দুর্গাপুজোর পাঁচদিন সমগ্র বাংলা দেশেই উৎসবের আমেজ লেগে থাকে। তবে বাংলাদেশেও করোনা ভ্রূকুটি এখনও দূর হয়নি। করোনার কারণে পুজো এবং প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে সেদেশেও। মণ্ডপে ঢোকার অনুমতি মিললেও দর্শনার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি পুরোহিতদেরও মাস্ক পরেই থাকতে হবে। তাছাড়া মণ্ডপে ঢোকার মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আয়োজকদের। দুর্গাপুজো মণ্ডপে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক যাতায়তের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ভিড় ঠেকাতে মেলা, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা করা যাবে না। দশমী শুক্রবার হওয়ায় জুম্মার নমাজের কারণে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রতিমা নিরঞ্জন করা যাবে না।