বর্ষাকাল মানেই ইলিশের মরশুম। এই সময়ই রুপোলি শষ্যের স্বাদ সবথেকে বেশি হয়। বাইরে ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে পাতে যদি পড়ে ইলিশের হরেকরকম পদ, তবে আর কী চাই। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মার, তবে তো কোনও কথাই হবে না। গত কয়েক বছর ধরে হাসিনার ইলিশ কূটনীতির ফলে দুর্গাপুজোর সময় পশ্চিমবঙ্গবাসীর পাতে বাংলাদেশের ইলিশ পড়েছিল। গত অগাস্টে হাসিনার পতনের পরও ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেও ইউনূস সরকার ভারতে ইলিশ রফতানি করেছিল। এবারও কি সেই ধারা বজায় থাকবে? যদিও তেমন আশার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এবার ইলিশ পাঠানোর উপরে কোপ বসাতে চলেছে বাংলাদেশ সরকার। অন্তত সেই দেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার কথাতে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এবার ভারতে ইলিশ রফতানির কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তাঁর বক্তব্য, 'এবার ভারতে ইলিশ রফতানির কোনও পরিকল্পনা নেই। ভারতেরই পত্রিকার তথ্য হলো এবার গঙ্গায় ইলিশ অনেক বেড়ে গেছে। যেকোনও কারণেই হোক, সাগরের ইলিশ ওদিকে গেছে। কাজেই তাদের আর আমাদের ইলিশের অপেক্ষা করা ঠিক হবে না।' ফরিদা আখতারের আরও বক্তব্য আমাদের এখানে যদি ইলিশের সংকট থাকে, তাহলে তাদের ওখানে আমাদের (ইলিশ) পাঠানোর কোনও কারণ নেই। হ্যাঁ গতবার যে কারণে পাঠানো হয়েছে সেটা হলো রাজনৈতিক সৌজন্যতা দেখানো। তবে যদি (ইলিশের) সরবরাহ বেশি থাকে বা সেইরকম পরিস্থিতি হয়, সেটি তখন দেখা যাবে। এখনও পর্যন্ত আমাদের সেরকম কোনো পরিকল্পনা নেই।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা বলছেন , ‘আমি খুবই চাচ্ছি, ইলিশের সরবরাহ বাড়ুক এবং দেশের মানুষ খাক। বিদেশে আমরা পাঠাচ্ছি শুধু দুটো দেশে। সেটা হলো, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। ওখানে প্রবাসীদের একটা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। তারা আমাদের রেমিট্যান্স দিচ্ছেন, তারা ইলিশ খেতে পারছেন না, এটার জন্য আমরা ১১ হাজার মেট্রিক টন রফতানির অনুমতি দিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ওই দিনই ঢাকা থেকে পালিয়ে দিল্লি আসেন তিনি। তার পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। সেই থেকে ধারাবাহিক ভাবে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দু’দেশের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও। সেই আবহে এ বার কলকাতা তথা বাংলার কোনও প্রান্তে পদ্মার ইলিশ আসেনি। এদিকে ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনা ‘ইলিশ কূটনীতি’ শুরু করেছিলেন। উৎসবের মরসুমে বিশেষভাবে ভারতে ইলিশ রফতানির অনুমতি দিতেন তিনি। তবে আগামী দুর্গাপুজোয় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরদের সেই ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।