বাংলাদেশে কি পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করা হচ্ছে? সে দেশে ১৮ জন হিন্দুর নামে দায়ের করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। 'দোষ', তাঁরা গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়েছিলেন! তার ফলে আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল, হাসিনা সরকার পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। যা নিয়ে সরব হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। সদ্য চট্টগ্রামে নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিরাট প্রতিবাদ মিছিল করেছিল হিন্দুরা। তাঁরা হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দাবি করেছেন। বিরাট জনতার সেই প্রতিবাদকে সম্ভবত ভালো চোখে দেখছে না বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। যাদের পিছনে মৌলবাদি সংগঠনগুলির হাত রয়েছে বলে ধারণা অনেকের।
বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমতি না থাকলে এতজন হিন্দুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যেত না! পুলিশের পক্ষে এত বড় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভবই নয় বলে মত তাঁদের। ১৮জন হিন্দুর নামে মামলা করা হলেও আরও ১৫ থেকে ২০ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে আরও কয়েকজনকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়ে ফাঁসানো হতে পারে।
ঘটনার সূত্রপাত ২৫ অক্টোবর। ওই দিন চট্টগ্রামে বিশাল প্রতিবাদ সভা করে হিন্দু সংগঠনগুলি। তাতে যোগ দেন সাধারণ হিন্দুরাও। হিন্দুদের জানমালের রক্ষা-সহ ৮ দাবিতে সোচ্চার হয় হিন্দু সমাজ। তারা দাবি করেছে, হিন্দুদের জন্য আলাদা সংখ্যালঘু মন্ত্রক গঠন, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে আইন আনতে হবে।
রাষ্ট্রদ্রোহের ধারায় মামলা হয়েছে পুণ্ডরিক ধামের সভাপতি চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীর বিরুদ্ধে। তিনি জানান,'হিন্দুদের অধিকাররক্ষার আন্দোলনের পিছনে বাংলাদেশের আওয়ামি লিগ ও ভারতের হাত রয়েছে বলে প্রচার করছে একটা অংশ। এটা কোনও রাজনৈতিক প্রতিবাদ নয়। বাংলাদেশকে হেয় করার জন্যও আমরা আন্দোলন করছি না। আমরা সরকারকে বলতে চাই, হিন্দুদের অধিকার রক্ষা করুন'।
গত ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার ফিরোজ খান বাংলাদেশ আইনের ১৮৬০ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেন। যার শাস্তি আজীবন কারাদণ্ড। একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামে নিউমার্কেট এলাকার জিরো পয়েন্টে গেরুয়া পতাকা তুলে ধরেছেন হিন্দুরা। চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের কথায়,'গেরুয়া পতাকার সঙ্গে সনাতনী সংগঠনগুলির কোনও যোগ নেই। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি প্রতিবাদস্থল থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। আমার সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই। ঘটনার সময় আমি স্থানীয় বিএনপি অফিসে ছিলাম। এক বিএনপি নেতা অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর ব্যাপারে তাদের দলও কিছু জানে না'।
এদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন,'বাংলাদেশে হিন্দু, খৃষ্ট্রান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর যেখানে হামলা ও লুঠপাট হচ্ছে, তার নিন্দা জানাচ্ছি'।
I strongly condemn the barbaric violence against Hindus, Christians, and other minorities who are getting attacked and looted by mobs in Bangladesh, which remains in a total state of chaos.
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) October 31, 2024
It would have never happened on my watch. Kamala and Joe have ignored Hindus across the…
ঘটনা হল, বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। একটা পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট হবে। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জমানায় সে দেশে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্য়ার ২২ শতাংশ। সেটাই কমে ৮ শতাংশের নীচে নেমে গিয়েছে। আরও একটি তথ্য বলছে, ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১.১ কোটি হিন্দু দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।