বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বড়সড় এক আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা দিল। যে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি মানবতাবিরোধী অপরাধে চার্জশিট গৃহীত হয়, তাহলে তিনি আর সংসদ নির্বাচন বা স্থানীয় কোনও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, সরকারি চাকরি করছেন এমন কেউ যদি অভিযুক্ত হন, তিনিও পদে বহাল থাকতে পারবেন না। আর যারা চাকরির জন্য আবেদন করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আবহে এই সিদ্ধান্তে অনেক রাজনৈতিক নেতা ভোটে লড়তে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লিগকে একেবারে শেষ করার ব্যবস্থা
বস্তুত, এই আইন এনে আওয়ামী লিগের ভোটে লড়ার সম্ভাবনা একেবারেই শেষ করে দিতে চাইছে ইউনূসের সরকার। হাস্যকর বিষয় হল, বাংলাদেশজুড়ে হিন্দু সহ সংখ্যালঘুদের উপর যে নির্যাতন চলছে, সেই সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনও বিচার চলছে না। ফলে এই ধরনের আইন কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আর কতটা দেশের স্বার্থে, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এমনকী কট্টরপন্থী ও একদা নিষিদ্ধ দল জামাত ই ইসলামিও বহাল তবিয়তে এখন বাংলাদেশে সক্রিয়। শুধু আওয়ামী লিগ নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের এই আইনে এক ঢিলে একাধিক পাখি মারার কৌশল। হাসিনার আমলের সরকারের আধিকারিকদের সহজেই বরখাস্তও করা যাবে নয়া আইনে। সব মিলিয়ে আইনি পথে অরাজকতার সেরা নিদর্শন স্থাপন করছে বাংলাদেশ।
সরকারি চাকরিও চলে যাবে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, নতুন আইনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধে চার্জশিট পাওয়া মাত্রই প্রার্থীর যোগ্যতা খারিজ হয়ে যাবে। শফিকুলের কথায়, আইনের নতুন ধারা অনুযায়ী, চার্জশিট গৃহীত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য থাকবেন না। পাশাপাশি তাঁরা সরকারি চাকরিতেও থাকতে পারবেন না। সরকার জানিয়েছে, এই নিয়ম শুধু সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেই নয়, স্থানীয় প্রশাসনের পদগুলিতেও প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ কেউ মেয়র, জেলা পরিষদ প্রধান বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থাকলেও, তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট গৃহীত হলেই পদ থেকে সরে যেতে হবে।
এই আইনি পরিবর্তন এল এমন এক সময়, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে ছাত্রদের ব্যাপক আন্দোলনের জেরে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাসিনার দলের বেশির নেতাই মানবতাবিরোধী অপরাধ ও দুর্নীতির মামলায় বিচারাধীন। অনেক নেতা জেলে, আবার অনেকে দেশের বাইরে পলাতক। এমনকী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলা চলছে। নতুন আইনের ফলে আওয়ামী লিগের নেতাদের নির্বাচনে লড়াই করার সম্ভাবনা একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। স্বাধীন প্রার্থী হিসেবেও তাঁরা প্রার্থী হতে পারবেন না, আওয়ামী লিগের বন্ধু কোনও রাজনৈতিক দলের হয়েও লড়াই করার পথও বন্ধ হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবের পর
এর আগের দিনই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, যাঁদের আদালত পলাতক ঘোষণা করেছে, তাঁদেরও যেন নির্বাচন লড়ার সুযোগ না দেওয়া হয়। পাশাপাশি, অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সুযোগ তুলে দেওয়ার কথাও বলেছিল কমিশন। তার পরের দিনই অন্তর্বর্তী সরকার আরও কড়া পদক্ষেপ নিল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলি ঘিরে।
সরকারি চাকরিজীবীদের আতঙ্ক
গত মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার একটি আইন প্রণয়ন করতে চেয়েছিল যাতে সরকারি কর্মচারীদের সহজেই বরখাস্ত করা যায়। সে সময়ে প্রশাসনের মধ্যে প্রবল অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য সরকার জানায়, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া কাউকে চাকরি থেকে সরানো হবে না। তাই আপাতত সেই বিরোধ থেমেছিল। তবে এবার নতুন ঘোষণার পর প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, কারণ চাকরি করলেও চার্জশিটের পর আর পদে থাকা যাবে না।
বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে বড়সড় আলোচনা শুরু হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এর ফলে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লিগের নেতৃত্ব পুরোপুরি কোণঠাসা হয়ে পড়বে।