scorecardresearch
 

Bangladesh MP Murder In Kolkata : সোনা পাচার-টাকা নিয়ে ঝগড়া-যুবতী; কলকাতার ফ্ল্যাটে ঠিক কীভাবে খুন বাংলাদেশের সাংসদ?

এই খুনের ঘটনায় যুক্ত ছিল এক যুবতীও। তার নাম শিলাস্তি রহমান। বাংলাদেশ পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, শিলাস্তিকে হয়তো টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিল খুনীরা।  

Advertisement
bangladesh mp anwarul azim murder Case bangladesh mp anwarul azim murder Case
হাইলাইটস
  • এই খুনের ঘটনায় যুক্ত ছিল এক যুবতীও
  • তার নাম শিলাস্তি রহমান

বাংলাদেশের সাংসদ আনোয়ারুল আজিমের খুনের ঘটনায় এবার উঠে এল সোনা পাচারের তত্ত্ব। আনোয়ারুল নিজেও সোনা পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। তার জেরেই কি তাঁকে খুন হতে হয়, প্রাথমিকভাবে এমনটাই মনে করছে বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ সূত্রে খবর, এই খুনের ঘটনায় যুক্ত ছিল এক যুবতীও। তার নাম শিলাস্তি রহমান। বাংলাদেশ পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, শিলাস্তিকে হয়তো টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিল খুনীরা।  

বাংলাদেশের শাসকদল আওয়ামি লিগের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনোয়ারকে খুনের অভিযোগে সৈয়দ আমানুল্লাহ, শিলাস্তি রহমান (মহিলা) ও ফয়সাল আলি ওরফে সাজি নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশ, আনোয়ারুলের ছোটোবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আকতারুজ্জামান শাহিন এই খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী। আনোয়ারুলের আর এক বন্ধু আমানুল্লাহ আমানও এর সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ বলছে, সাংসদ আনোয়ারুলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে কলকাতায় এসেছিল শাহিন। সে কলকাতায় হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে বাংলাদেশে যায়। 

সাংসদ আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফিরদৌস ডোরিন বুধবার শেরেবাংলা নগর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। আবার কলকাতা পুলিশও এর তদন্ত করছে। পুলিশ আনোয়ারুলের মৃতদেহ বহনকারী গাড়ি চালককে গ্রেফতার করেছে। 

আরও পড়ুন

কীভাবে আনোয়ারুলকে খুনের ষড়যন্ত্র হয়? 

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন,ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে আনোয়ারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে আকতারুজ্জামান শাহিন। সে ঝিনাইদহের বাসিন্দা। তার আমেরিকার নাগরিকত্বও রয়েছে। তার ভাই ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র। উল্লেখ্য, আনোয়ারুল ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ৩০ এপ্রিল আমান ও তার এক বান্ধবী শিলাস্তি রহমানের সঙ্গে কলকাতায় আসে শাহিন। তারা সঞ্জিবা গার্ডেনে একটি ডুপ্লেক্স ভাড়া নেয়। শাহিনের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ আগে থেকেই কলকাতায় ছিল। দুজনে মিলে খুনের ষড়যন্ত্র করে। ১০ মে বাংলাদেশে ফিরে আসে শাহিন। হত্যাকাণ্ডের পুরো দায়িত্ব সে আমানের হাতে তুলে দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে আরও দুই হিটম্যানকে কলকাতায় ডেকে আনে আমান। তাদের নাম ফয়জল সাজি ও মুস্তাফিজ।  গত ১১ মে কলকাতায় এই ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়।

Advertisement

কীভাবে খুন করা হয় সাংসদকে? 

গোয়েন্দারা জানান, আমানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শাহিন আগে থেকেই জানত যে, ১২ মে কলকাতায় যাবে আনোয়ারুল। তাই শাহিন আমানকে হত্যার সব প্রস্তুতি নিতে বলে। হত্যার জন্য সে কিছু ধারালো অস্ত্রও কিনেছিল। এমপি আনোয়ারুল ১২ মে দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় আসে। প্রথম দিন বন্ধু গোপাল নামে একজনের বাড়িতে থাকে। ১৩ মে তাকে ফ্ল্যাটে ডেকে নেয় ঘাতকরা। সেদিনই আনোয়ারুল সঞ্জিবা গার্ডেনের অ্যাপার্টমেন্টে যায়। তখন আমান, তার সহযোগী ফয়জল, মুস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ সাংসদকে ধরে ফেলে। প্রথমে আনোয়ারুল টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। তাঁর কাছে শাহিন টাকা পায় বলে দাবি করে দুষ্কৃতীরা। তখনই বচসা বাধে। আর আনোয়ারুলকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। এদিকে খুনের পর আমান বিষয়টি শাহিনকে জানায়। আমানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা জানান, শাহিনের নির্দেশে আনোয়ারুলের লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। যাতে খুনের প্রমাণ সহজে লোপাট করা যায়। সেজন্য ফ্ল্যাটের পাশের একটি শপিংমল থেকে দুটি বড় ট্রলি ব্যাগ ও পলিথিন কেনা হয়। এসব পলিথিনের ব্যাগ ও ট্রলিতে লাশের টুকরো রাখা হয়।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, খুনের পর সেই মৃতদেহ ফ্ল্যাটে রাখা হয়। খুনীরা বাইরে থেকে ব্লিচিং পাউডার এনে তা দিয়ে ফ্ল্যাটের রক্তের দাগ পরিষ্কার করে। সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের কাছে ওই ফ্ল্যাট ও আশপাশের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। এসব ফুটেজে থেকে পরিষ্কার, আমান ও তার সহযোগীরা এমপি আনোয়ারুলের ফ্ল্যাটের বাইরে রাখা ট্রলি ব্যাগ ও জুতা নিয়ে যাচ্ছে। শাহিনের মহিলা বন্ধু শিলাস্তি রহমান বাইরে থেকে পলিথিন ব্যাগ ও ব্লিচিং পাউডার নিয়ে আসছে।  হত্যাকাণ্ডের পর আমানের নির্দেশে তার দুই সহযোগী আনোয়ারুলের ফোন দুটি নিয়ে বিভিন্ন দিকে চলে যায় যাতে, তদন্তকারীরা এমপির অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। পরে ১৭ মে বাংলাদেশে ফিরে আসে ফয়জল ও মুস্তাফিজ। 

আমানের মতে, শাহিন এমপি-কে হত্যার জন্য পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত ছিল। খুনের আগে  কিছু টাকাও তাদের দেওয়া হয়। খুনের পর আমান ঢাকায় ফিরে আসে। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় শাহিনের। পুলিশের দাবি,আমান মোহাম্মদপুরে তার বোনের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সূত্রের খবর, প্রধান আসামি শাহিন আমেরিকায় পালিয়ে গেছে। গত ১০ মে সাংসদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ঢাকায় ফিরেছিল শাহিন। সাংসদ সদস্যের নিখোঁজের খবর সামনে আসার পর ১৮ মে নেপালে পালায় সে। ২১ মে নেপাল থেকে দুবাই যায়। ২২ মে দুবাই থেকে আমেরিকা চলে যায়। 

পুলিশের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোনা চোরাচালানের যোগ রয়েছে। আকতারুজ্জামান শাহিন একজন স্বর্ণ চোরাকারবারী। আনোয়ারুলের বিরুদ্ধেও সোনা চোরাচালানের অভিযোগ ছিল।

Advertisement