বাংলাদেশের ইলিশ মাছ নিয়ে হা-হুতাশের শেষ নেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের। ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইলিশ আমদানি। পুজোর সময় পদ্মার ইলিশ পাতে পড়বে রাজ্যবাসীর, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও আশাও নেই। এদিকে সেদেশের মৎস্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের বাজারে ইলিশ মাছের দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। ইলিশের দাম ক্রেতাসাধারণের নাগালে রাখতে ভারতে রফতানি বন্ধ রাখা হয়েছে। এর পরও বাংলাদেশের বাজারগুলোতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে দাম কমেছে মনে করে ক্রেতারা বাজারে ইলিশ কিনতে গিয়ে বিমুখ হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখন কততে মিলছে ইলিশ?
মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গত ১১ অগাস্ট সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইলিশ নিয়ে বলছিলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ রফতানি করা হবে। একই সঙ্গে দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রফতানি হবে সেটা হতে পারে না। সরকার পতনের আগে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে গুনতে হয়েছে হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। সরকার বিদায়ের পর সেই দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজার, রামপুরা, বাড্ডা কাঁচাবাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১,৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ইলিশের চড়া দাম নিয়ে ক্রেতারা স্বভাবতই নাখোশ।
রফতানি বন্ধের পরও ইলিশের দাম চড়া
ভরা মরশুম হিসেবে এখন ইলিশের দাম কমার আশায় ছিলেন অনেকেই। তবে বাজারের চিত্র ভিন্ন, ১ কেজি আকারের মাছ কিনতে গুনতে হচ্ছে অন্তত দেড় হাজার টাকা। জেলেরা বলছেন, সাগরে ২৩ জুন পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ মিলছে না। কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা বললেন, ইলিশের দাম এখনও তেমন কমেনি, সরবরাহও খুব বাড়েনি। বিক্রেতারা বলছেন, ভরা মরশুমেও বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ আসছে না। বাজারে এখন ইলিশের যে পরিমাণ চাহিদা, সে অনুযায়ী সরবরাহ নেই। এতে ইলিশের দাম কমছে না। জেলেদের জালে ইলিশ কম ধরা পড়ায় এবার আড়তেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার কারণ কী?
বাংলাদেশের ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভলান্টারি কনজিউমারস ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজল বলছেন, ‘ইলিশ রফতানি বন্ধ করায় মনে হচ্ছিল দেশের মানুষ এবার কম দামে ইলিশ খেতে পারবে। দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে, ভারতে রফতানির কারণেই দেশের বাজারে ইলিশের দাম চড়া থাকে। কিন্তু রফতানি বন্ধের পরও বাজারে এর কোনো প্রভাব এখনো আমরা দেখতে পাইনি। আগের চড়া মূল্যেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।’ খলিলুর রহমান আরও বলছেন, বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম থাকার দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হতে পারে, এবার প্রকৃতপক্ষেই ইলিশ কম ধরা পড়ছে, যে কারণে বাজারে কম আসছে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, ইলিশের ব্যবসায় জেলেদের যারা দাদন দেয়, তারা কারসাজি করে মজুদ বাড়াচ্ছে, যেহেতু ইলিশ মাছ কোল্ড স্টোরেজে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পরে মরশুম শেষে বাড়তি দামে বিক্রি করা হবে। তাই বিষয়টি সরকারের তদারকের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর দেখা উচিত।