
bangladesh quota movementমুখ ঢাকা স্কার্ফে, হাতে স্প্রে বোতল। তাতে লাল জল। এভাবেই পুলিশের সামনে আন্দোলনে (Bangladesh Quota Movement) ছাত্রীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (Dhaka University) শুধু নয়, গোটা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে পড়া কোটা বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রীদের কাছে এটাই এখন আত্মরক্ষার 'অস্ত্র'। লাল জলে আসলে রয়েছে লঙ্কার গুঁড়ো। পুলিশ আক্রমণ করতে আসলেই তাদের চোখে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই লাল লঙ্কার গুঁড়ো। শুধু তাই নয়, রয়েছে আধলা ইট, ছুঁচও। গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধা সংরক্ষণ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন রুখতে মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে প্রশাসন।
কেন লঙ্কার গুঁড়ো হাতে ছাত্রীরা
লঙ্কার গুঁড়োর জল হাতে ছাত্রীরা জানান, আত্মরক্ষার্থে তারা লঙ্কার গুঁড়ো জল হাতে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। কারণ হিসেবে তাদের দাবি, আন্দোলনরত অবস্থায় বেশ কিছু দুষ্কৃতি তাদেরকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে এবং হাত ধরেও মচকিয়ে দিয়েছে। তাই আত্মরক্ষা ও হাতাহাতি এড়াতে এ ধরনের পন্থা তাঁরা বেছে নিয়েছেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আরও কয়েকশো মানুষ আহত হয়েছেন। প্রান হারিয়েছেন ৩৯ জন। কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের মধ্যে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখনো অনেক জায়গায় সংঘর্ষ চলছে।

গুলি চালিয়েছে প্রশাসন
আন্দোলনকারীদের থামাতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ব্যবহার করছে পুলিশ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে অনেক কোম্পানি অদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। ঢাকা ও সারাদেশের মধ্যে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বাস কাউন্টারে উপস্থিত কর্মচারীরা জানান, বাস মালিকরা কোনও বাস রাস্তায় নামাতে চাইছেন না। ঢাকা টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকায় সংঘর্ষ কভার করতে গিয়ে মেহেন্দি হাসান নামে এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকায় কানাডা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে ৬০ জন পুলিশ আটকে পড়েছিলেন, যাদের হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করা হয়।

ভারতীয়দের নির্দেশ দিল হাই কমিশন
ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয়দের জন্য পরামর্শ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক, ভারতীয় সম্প্রদায়ের সদস্য এবং বাংলাদেশে বসবাসরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ির বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাহায্যের জন্য ভারতীয় হাই কমিশন কয়েকটি জরুরি নম্বরও চালু করেছে। বর্তমান সংরক্ষণ ব্যবস্থার অধীনে ৫৬ শতাংশ সরকারি চাকরি সংরক্ষিত। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য, ১০ শতাংশ অনগ্রসর প্রশাসনিক জেলার জন্য, ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, ৫ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত। মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের বিরুদ্ধেই আন্দোলন চলছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজার সরকারি চাকরি তৈরি হয়, যার জন্য প্রায় ৪ লক্ষ প্রার্থী আবেদন করেন।