ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিনি। তবে এপার বাংলার মনও খুবও তাড়াতাড়ি জয় করে নিয়েছেন তিনি। দুই বাংলার ক্রাশ,যাঁর হাসিতে ঘায়েল লাখো পুরুষের হৃদয়। তিনি তাসনিয়া ফারিন। 'কারাগার', 'আরো এক পৃথিবী'র মতো কাজ করেছেন তাসনিয়া। Bongo-র নতুন ছবি ‘অসময়’। তাতে উর্বি, প্রধান চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। ইতিমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে তাসনিয়ার এই সিরিজ। সেই অভিজ্ঞতাই বাংলাদেশ থেকে শেয়ার করলেন তাসনিয়া bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে।
দুই বাংলাতেই মুক্তি পেয়েছে 'অসময়', আপনার করা অন্য চরিত্রগুলো থেকে উর্বি চরিত্র কতটা আলাদা?
তাসনিয়া ফারিন: উর্বি চরিত্রটা আমার কাছে খুবই নতুন কারণ এ ধরনের চরিত্রে আগে কাজ করার কোনও সুযোগ হয়নি। আসলে এখানে উর্বি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে এবং তার সঙ্গে ভীষণ সরল। এরপর মেয়েটি না বুঝেই এমন এক জায়গায় ফেঁসে যায়, ওখান থেকে তাঁর ট্রান্সফর্মেশনটা জেলের মধ্যে, এই ব্যাপারগুলি এই কম্বিনেশনটা আগে অন্য কোনও চরিত্রে পাইনি। তাছাড়া উর্বির পারিবারিক জীবন, ইউনিভার্সিটি জীবন পরবর্তীকালে জেলের জীবন তাঁকে আমাদের চারপাশে থাকা কোনও সাধারণ মেয়ের কথাই মনে করিয়ে দেবে, যাঁর লাইফটা খুব ভাল যাচ্ছিল কিন্তু একটা দুর্ঘটনা এসে সব ওলটপালট করে দিল।
দর্শকদের থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
তাসনিয়া ফারিন: অসময় মুক্তির আগে থেকেই দর্শকদের থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি আর মুক্তির পর দর্শকেরা প্রচুর ভালোবাসা দিয়েছেন। অসময় মুক্তির আগে একটা প্রিমিয়ার হয়েছিল যেখানে একটা কনটেস্টে জিতে বেশ কিছু দর্শকেরা ছিলেন। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রির কিছু মানুষও ছিল, তাঁদের সকলের সঙ্গে বসে লাইভ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেটা অবিশ্বাস্য প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকেই বলেছেন যে কেন আমরা ছবিটা হলে দিচ্ছি না। দর্শকেরা আসন ছেড়েই উঠতে পারেনি, যেখানে আবেগ দরকার ছিল, যেখানে হাসা দরকার সব রসদই মজুত ছিল। মুক্তির পর থেকেই অনেক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি, প্রতিটা চরিত্রই দর্শকরা খুব ভালোবেসেছে এছাড়া এই গল্পের সঙ্গে অনেকেই কানেক্ট করতে পেরেছে। আমার মনে হয় এরকম অভূতপূর্ব প্রতিক্রিয়া খুব কম কাজ থেকেই আসে, আর আমি ভাগ্যবান যে আমার বছরটা দারুণভাবে শুরু হল।
এই চরিত্রের জন্য নিজেকে কতটা ভেঙে গড়তে হয়েছে?
তাসনিয়া ফারিন: এই চরিত্রটার জন্য প্রথমত চ্যালেঞ্জটা ছিল মানসিকভাবে। প্রথমত এই চরিত্রটার জন্য প্রয়োজন ছিল সমাজের সঙ্গে পরিচয় হওয়া, কারণ উর্বি বলে মেয়েটা যখন জেলে যায়, তারপর থেকে তাঁর জীবনে যে বদলটা আসে তা কোনওদিনই ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেই অসহয়তা ওই পরিস্থিতিতে উর্বি অনুভব করেছে, সেই সংঘর্ষটা আমি সত্যি জানি না। কিন্তু ওই পরিস্থিতিতে পরলে কী রকম লাগতে পারে, সেই আলোচনা তো অবশ্যই হয়েছে পরিচালকের সঙ্গে। আমি চেষ্টা করেছি উর্বি চরিত্রটার সঙ্গে ন্যায় করার।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করেছেন, অভিজ্ঞতা কেমন?
তাসনিয়া ফারিন: আমি অতনুদার (অতনু ঘোষ) ছবি আরও এক পৃথিবীতে কাজ করেছি। অবশ্যই খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট বেঙ্গল জার্নালিজম অ্যাসোসিয়েশ অ্যাওয়ার্ড থেকে আমায় সেরা প্রমিশিং অভিনেত্রী হিসাবে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। আমি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আরও কাজ করতে চাই, তবে সেটা ওই পর্য়ায়ের বা তার চেয়েও ভাল কিছু হলে তবেই, নয়তো কাজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমি কাজ করতে চাই না।
জয়া আহসান, নুসরত ফারিয়া, মাহিয়া মাহি সকলেই এই বাংলায় মেইনস্ট্রিম সিনেমায় চুটিয়ে অভিনয় করছেন, তাসনিয়া ফারিনের নামও কি সেই তালিকায় যুক্ত হবে ?
তাসনিয়া ফারিন: আমি আসলে মেইনস্ট্রিম বা নন মেইনস্ট্রিম বলে আলাদা কিছু করতে চাই না, আমার কাছে অগ্রাধিকার পায় গল্প ও আমার চরিত্রটা কী এবং সেই চরিত্রে কতখানি অভিনয় করার সুযোগ আছে। তাই এটাই বলব যে একটা মেইনস্ট্রিম ছবি হলেই সেটা আমি করব না এটা বলতে চাই না আবার মেইনস্ট্রিম ছবি যেটার গল্প ভাল নয় আমি করব এমনটাও বলছি না। তবে আমার কাছে এ ধরনের প্রস্তাব এলে আমি ভেবেচিন্তে দেখব যে করাটা ঠিক হবে কিনা।
দুই বাংলার ক্রাশ আপনি, কেমন লাগে এই বিষয়টা?
তাসনিয়া ফারিন: আসলে আমার অভিনয় নিয়ে কেউ কথা বললে বা আমার অভিনীত চরিত্র বা কনটেন্ট নিয়ে কথা বললে সেটাই আমার ভাল লাগে। হ্যাঁ, সেই সঙ্গে আমি সৌভাগ্যবান যে অনেক মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি দুই বাংলাতেই। আমি চাই ভবিষ্যতে আরও কাজ করতে যাতে যে আস্থা তৈরি হয়েছে আমার ওপর দর্শকদের সেটা পূরণ করতে পারি।
আচমকা বিয়ে করে নিলেন গত বছর, সংসার জীবন কেমন কাটছে?
তাসনিয়া ফারিন: ভাল-মন্দ মিশিয়ে সংসার ভালোই কাটছে।
ট্রোল-বিতর্ককে কীভাবে সামলান?
তাসনিয়া ফারিন: ট্রোল-বিতর্ক এইসব জীবনের অঙ্গ। আমরা যাঁরা পাবলিক ফিগার, তাঁরা মুক্ত কাগজে সই করার মতো এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। কিন্তু সেটা নিজের মনে মধ্যে বাড়তে দেওয়া সেটা আমি কোনওদিনও করি না। কারণ আমার মনে হয় নিজেকে জানাটা খুব জরুরি যে আমি কী বা আমি কে। কোনও গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটাকে সাদরে গ্রহণ করা এবং কোনটা গঠনমূলক নয় সেটা সনাক্ত করা ও সেটাতে ভেঙে না পড়া। আমি চেষ্টা করি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে। আমার কাজের পোস্ট ছাড়া আমি খুব একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকি না। আসলে মানুষ নিজেদের ফ্রাসটেশন থেকে এইসব করে থাকে। আর আমার তাদের জন্য খারাপই লাগে যারা এই ধরনের মন্তব্য করে।
কলকাতায় কবে আসছেন? আর এলে কী শপিং করবেন?
তাসনিয়া ফারিন: কলকাতায় আসব আমি ফেব্রুয়ারির শেষে অথবা মার্চে। এখনই ঠিক বলতে পারছি না। শপিং তো ওভাবে ঠিক লিস্ট করে করা হয় না। তবে এখানরা এথনিক পোশাক একটু অন্য ধরনের হয়, তো সেটাই কিনে থাকি।
নেক্সট কোনও বাংলা ছবির প্রস্তাব এসেছে কিনা?
তাসনিয়া ফারিন: সিনেমা, ওয়েব সিরিজের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু কোথাও যেন মনে হচ্ছে যে আমি যে ছবিটা করে এসেছি, সেটার সমপর্যায়ে বা তার চেয়েও ভাল কিছু আমার মনে হয়নি। একটা ছবির কথা হয়েও এখনও হয়নি আপাতত সেটা হচ্ছে না বা পিছিয়ে গিয়েছে। আপাতত বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও ছবি করার মতো পাইনি। আশা রাখছি সামনে কোনও ভাল কাজ হলে অবশ্যই আমি করতে চাই।
প্রিয় বাঙালি খাবার কোনটা?
তাসনিয়া ফারিন: প্রিয় বাঙালি খাবার বলতে আমার ডাল-ভাত, আলু ভর্তা খুব পছন্দ। শাক-সবজিটা বেশি খাওয়া হয়। মাছ আমি খাই না। তবে কলকাতায় এলে ফুচকা অবশ্যই খাওয়া হয়, সেটা আমার খুবই প্রিয়।