দিঘা এবং ডায়মন্ড হারবার মোহানায় টন টন ইলিশ মিলছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই কলকাতাসহ সারা রাজ্যে ইলিশের দাম অনেকটাই কমবে। আর এপারের মানুষ চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় রয়েছে পদ্মার ইলিশের। যদিও এবার বাংলাদেশের চিত্রটা অকেবারেই আলাদা। ইলিশ উৎপাদনে প্রথম স্থান পাওয়া বাংলাদেশে এবার হাত দেওয়া যাচ্ছে না রুপোলি ফসলে।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সহ অন্যান্য জায়গা যেমন দিঘা ইত্যাদি জায়গায় এখন ইলিশ মাছ অনেক কম দামে মিলছে। শুক্রবার দিঘায় বিপুল পরিমাণে ইলিশ মাছ ওঠার ফলে ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কিলো দরে। আবার এক কিলো বা তার বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। আবার কোন কোন জায়গায় ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কিলো দরে। যদিও এই সকল সস্তার ইলিশ মূলত গঙ্গার খোকা ইলিশ। তবে গঙ্গার ইলিশ অথবা খোকা ইলিশের তুলনায় বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের দাম সবসময়ই চড়া থাকে। কিন্তু এবারের ভরা বর্ষার মরশুমেও যে ইলিশের দাম ওপারে এত চড়া থাকবে তা বাংলাদেশিদের কাছে চিন্তাভাবনার একেবারেই বাইরে। ভরা বর্ষার মরশুমেও বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অন্যতম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশের আমদানি নেই। যে কারণে পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের জালে ওঠা স্বল্প সংখ্যক রূপালি ইলিশ খুবই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে ইলিশের সংকট দেখা দেওয়ায় চাঁদপুরে এখন এক একটি ইলিশের দাম দাঁড়িয়েছে ১০,০০০ টাকা। বাজারে মাছের যোগান কম থাকায় এত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কিছু মাছ নিয়ে বসলেও খরিদ্দার পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন অনেকেই। মাছের দাম জিজ্ঞেস করে ক্রেতারা মাছ না কিনেই চলে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের নদীতে যেই মাছগুলো ধরা পড়ছে সেগুলোর বেশিরভাগই আকারে ছোট ও মাঝারি। ১ কেজি ওজনের ইলিশের মণ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, ৮'শ থেকে ৯'শ গ্রাম ৮০ হাজার টাকা, ছোট সাইজ ৫০০ গ্রামের ইলিশের মণ ৫০ থেকে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোটাঃ হাজী শবেবরাত সরকার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি। তবে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ পুরোদমে আসা শুরু করলে তখন মৎস্য আড়ত জমে উঠবে। আর দামও নাগালের মধ্যে চলে আসবে।’
চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়ার মৎস্য আধিকারিক মো. তানজিমুল ইসলাম বলেন, এই সময়ে ইলিশ কমই পাওয়া যায়। আশা করছি এই সমস্যা সহসাই কেটে উঠবে। টানা আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে বিগত দুসপ্তাহ ধরে নদীতে জাল ফেললেও বাংলাদেশের নদীগুলিতে সেভাবে ইলিশ ধরা পড়ছে না। সাগরে এই সময় আগের বছরগুলিতে প্রতিদিন ২ হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হতো। এবার সেই সংখ্যাটা মাত্র ৩০ মণ। এই নিয়ে বিরশাল মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বৃষ্টিপাত না হলে সাধারণত ইলিশ ধরা পড়ে না। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। এছাড়াও এ বছর অতিরিক্ত গরমের কারণেও ইলিশ পেতে অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষের দিক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।