scorecardresearch
 

Bangladesh Economy: শিকেয় পণ্য আমদানি-রফতানি, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হু হু করে; কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হয়েছে। অর্থনীতি থেকে আইনশৃঙ্খলা, পুরো ব্যবস্থাকে ফের স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু বালাদেশ বর্তমানে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। ব্যাঙ্কগুলি বেলআউটে রয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হিংসার পর সাপ্লাই চেইনও ভেঙে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে?

Advertisement
বাংলাদেশের অর্থনীতি কি ডুবে যাবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি কি ডুবে যাবে?

বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হয়েছে। অর্থনীতি থেকে  আইনশৃঙ্খলা, পুরো ব্যবস্থাকে ফের স্বাভাবিক পথে  ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু  বালাদেশ বর্তমানে  মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন। ব্যাঙ্কগুলি বেলআউটে রয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হিংসার পর সাপ্লাই চেইনও ভেঙে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে কীভাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে?

বাংলাদেশে কোটা নিয়ে গত জুলাই মাস থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সারাদেশে তা তীব্রতর হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি এমন ছিল যে প্রথমে সারা দেশে সরবরাহ চেইন প্রভাবিত হয়েছিল এবং তারপরে ক্রমে চ্যালেঞ্জগুলি বাড়তে থাকে। এই সময়ে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ অন্যান্য জিনিসের দাম। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দেখায় যে জুলাই মাসে ভোক্তা মূল্য সূচক ১.৯৪ থেকে ১১.৬৬ শতাংশে বেড়েছে। এ থেকেই অনুমান করা যায় পরিস্থিতি কত দ্রুত অবনতি হয়েছে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতও সমস্যায় পড়েছে। সবচেয়ে বড় পাইকাররা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং বর্তমানে বিপুল মুনাফা না করার দ্বিমুখী  চাপে রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন,কিছু সময় পরেই তা বাড়বে। দেশে অনিশ্চয়তার মধ্যে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্ক  থেকে ২ লাখ টাকার নগদ উত্তোলনও  নিষিদ্ধ করেছে।

আরও পড়ুন

আগামী মাসে দাম আরও বাড়বে
আজতক ঢাকার বৃহত্তম পাইকারি বাজার কাওরান মার্কেট পরিদর্শন করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী শফিকুর বললেন, খাবারের দাম কিছুটা বেড়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ক্রমে ফুরিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের কাছে ঘাটতি রয়েছে। আগামী মাসে দাম বাড়বে,  তবে অনিশ্চয়তা এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের কারণে আমরা দাম বাড়াচ্ছি না। বাজারের স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতা রফিক বলেন, বর্তমানে আমরা দাম সার্বজনিক  রাখছি তবে সরকার আশ্বাস দিয়েছে আগামী মাসের মধ্যে আমরা দাম বাড়াতে পারব। যেহেতু জিনিসগুলি ইতিমধ্যে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে।

Advertisement

বাংলাদেশ ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ডাল, ড্রাই ফ্রুটস, মশলা ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা কমছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ জুলাই ২০.৪৮ বিলিয়ন ডলারে ছিল, যা এক মাস আগের ২১.৭৮ বিলিয়ন ডলারের থেকে কমেছে। বাংলাদেশের মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার হ্রাস অন্তর্বর্তী সরকারকে বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে। এর মধ্যে নগদ তোলার সীমাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকার নগদ উত্তোলন মাত্র ২ লক্ষ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে যা বাজারে সংকট বাড়িয়েছে এবং ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে যার কারণে চাহিদা কমছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ইসলাম মোহাম্মদ বলেন, সরকারের নতুন আদেশ এসেছে। এখন আমরা ব্যাঙ্ক  থেকে ২ লাখের বেশি বাংলাদেশি টাকা তুলতে পারছি না, তাই আমরা বেশি বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে পারছি না এবং পুরো ব্যবসা ধীর হয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- আমদানিতে প্রভাব পড়বে
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের কারণে তারা প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে পারবেন না। যার কারণে আমদানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পণ্যের দাম বৃদ্ধি দেখা যাবে। গত কয়েক সপ্তাহের অনিশ্চয়তা দেশটিকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এখন এটি অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করছে। জনগণের ক্ষোভের ভয়ে পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারাও ভালো মুনাফা না পেয়ে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করলেও আগামী মাস নাগাদ দাম বাড়বে বলে সতর্ক করছেন।

অনেক ব্যাঙ্ক  ক্লিনিক্যালি ডেড
বাংলাদেশের ব্যাঙ্কগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের অনেক ব্যাঙ্ক  ক্লিনিক্যালি ডেড হলেও বেলআউটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ফাহমিদা বলেন, যেসব ব্যাঙ্ক  ধ্বংসের মুখে ছিল সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণের কয়েকদিন পর এই সাংবাদিক  সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি।

ফাহমিদা বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাঙ্ক  আছে, যেগুলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। তারা এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। উপরন্তু, পুঁজিপতিদের দ্বারা ভুল অধিগ্রহণের কারণে পূর্বে অনেক ভালো ব্যাঙ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যেমন, ইসলামী ব্যাঙ্ক বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয় যখন এস আলম গ্রুপ ব্যাঙ্কটির দখলে নেয় এবং প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। একইভাবে, পাবলিক সেক্টরের জনতা ব্যাঙ্ক  একক ঋণগ্রহীতার সীমা লঙ্ঘন করে অ্যানোনটেক্স গ্রুপকে ১০ হাজার  কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ফাহমিদা আরও বলেন, বড় অঙ্কের ঋণ দিলে ব্যাঙ্কের  অবস্থা খারাপ হয় এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তারা ঋণ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, শুধু একজনকে এত ঋণ দিলে অন্য গ্রাহকরা কী পাবে?

ফাহমিদা বলেছে ন, জনগণের টাকা বিনিয়োগ করে এসব ব্যাঙ্ক বেলআউটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, তবে এ ধরনের ব্যাঙ্ক  বন্ধ হলে ভালো হবে। সিপিডি আরও বলেছে যে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৪টি বড় ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় ৯২,২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছিল। এই পরিমাণ ২০২৪ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ বা ২০২৩ অর্থবছরের জন্য দেশের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশের সমতুল্য।

অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা অগ্রাধিকার
অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা এবং ব্যাঙ্কের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন  গভর্নর আহমেদকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মহম্মদ ইউনুস। শুক্রবার তিনি তার ১৬ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের পোর্টফোলিও ঘোষণা করেন। আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কার্যক্রম পুনরায় চালু করে ব্যাঙ্কগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাই সরকারের অগ্রাধিকার। তারপর আমরা উন্নতি আনতে কাজ করব। তিনি আরও বলেন, নানা কারণে দেশের অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা। অর্থনীতি একবার বন্ধ হয়ে গেলে, এটি পুনরায় চালু করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। ঢাকা ট্রিবিউনের খবর অনুসারে  তিনি বলেন, অর্থনীতিতে অনেক সমস্যা রয়েছে। ব্যাঙ্কিং খাতের সমস্যা, মূল্যস্ফীতিসহ নানা জটিলতা রয়েছে। আমাদের সব ফ্রন্টে কাজ করতে হবে। শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। এর আগে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানও পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে এবং সারা দেশে পৃথক পৃথক ঘটনায় ২৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। জুলাইয়ের মাঝামাঝি প্রথমবারের মতো কোটাবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় দেশটিতে। তারপর থেকে মৃতের সংখ্যা ৫৬০ ছুঁয়েছে।

Advertisement

Advertisement