Tarique Rahman Bangladesh Return: সঙ্কটজনক খালেদাকে দেখতে বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না ছেলে তারেক, কেন?

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফেরা এখনও অনিশ্চিত। প্রসঙ্গ,বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান গত ১৭ বছর ধরে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন।

Advertisement
 সঙ্কটজনক খালেদাকে দেখতে বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না ছেলে তারেক, কেন?সঙ্কটজনক খালেদাকে দেখতে এখনও বাংলাদেশে ফিরতে পারলেন না ছেলে তারেক

 বিএনপি চেয়ারপার্সন তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া  গত কয়েক দিন ধরেই ঢাকার এক হাসাপাতেল চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খালেদার বর্তমানে যা শারীরিক অবস্থা, তাতে এই মুহূর্তে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিদেশ থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়েছে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউ-তে রয়েছেন খালেদা। গত ২৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকদের মতে, ৮০ বছর বয়সী এই প্রবীণ রাজনীতিবিদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল। গত কয়েকদিন ধরে তা ‘স্থিতিশীল’ হলেও যে কোনও মুহূর্তে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য যেভাবে সহযোগিতা ও শুভকামনা জানানো হয়েছে, এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা খালেদা পুত্র তারেক রহমান। একই সঙ্গে বাংলাদেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনকে জিয়া পরিবারের ‘শক্তির উৎস’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তাঁর ফেসবুক পোস্টে। 

 

খালেদা পুত্র তারেক মাকে দেখতে আসছেন?
খালেদা জিয়ার এই শারীরিক পরিস্থিতিতে ছেলে তারেক বাংলাদেশে ফিরছেন? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।  খুব শিগগির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সোমবার রাতে ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি নাগাদ তারেক এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন শীঘ্রই দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার প্রস্তুতি শেষ করে এনেছেন। ‌বিএনপি নেতৃত্ব জানিয়েছিল তাদের নেতা নভেম্বরেই ফিরবেন। এখন যখন মায়ের গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তারেক দেশে ফিরছেন না তখন সংশয় তৈরি হয়েছে সত্যিই তিনি ভবিষ্যতে ফিরতে পারবেন কিনা। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যে অবনতি হয়েছে তাতে বিএনপি'র শীর্ষ নেতৃত্বে শূন্যস্থান তৈরি হতে চলেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার উপর তাঁর পুত্রের দেশে ফেরা নিয়ে ঘোরতর সংশয় রয়েছে।

Advertisement

কী বলছেন তারেক?
‘সংকটকালে মায়ের স্নেহ–স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনও  সন্তানের মতো আমারও রয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি এ–ও বলেছেন, এখনই দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। গত শনিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

ইউনূসের অন্তবর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে এক দিনে তাঁকে ‘ট্রাভেল পাস’ দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা মো. তৌ‌হিদ হোসেন। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা তৌ‌হিদ হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে কোনো বিধিনিষেধ নেই, এক দিনে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব।’ তিনি বলেন, ‘এটার নিয়ম হচ্ছে যে যখন পাসপোর্ট থাকে না বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলে তখন কেউ যদি আসতে চান, তাহলে তাঁকে আমরা ওয়ান টাইম পাস একটা দিয়ে দিই, একবার দেশে আসার জন্য। তো এটাতে এক দিন লাগে। কাজেই এটা উনি যদি আজকে বলেন যে উনি আসবেন, আগামিকাল হয়তো আমরা এটা দিলে পরশু দিন প্লেনে উঠতে পারবেন। কোনো অসুবিধা নাই। এটা আমরা দিতে পারব।’ তৌ‌হিদ হোসেন স্পষ্ট জানিয়েছেন,  আমার জ্ঞান যে পর্যন্ত আমি শুধু এটুকু বলতে পারব যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নেই যে উনি আসতে পারবেন না।’

২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তারেক
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ওয়ান–ইলেভেনের পর ২০০৮ সালে জেল থেকে বেরিয়ে সপরিবার ব্রিটেনে যান। তারপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই দল পরিচালনা করে আসছেন। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লিগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল হওয়ার পর তাঁর দেশে ফেরার আলোচনা শুরু হয়। তারেক রহমান শিগগিরই ফিরবেন, এমন কথা বললেও সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ জানাচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। এর মধ্যে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে গত শুক্রবার শোনা যাচ্ছিল, তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরছেন। এদিকে  ট্রাভেল পাসের বিষয়ে উপদেষ্টার মন্তব্য এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে যে, তারেক এখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাননি কিংবা নেননি। কারণ সাধারণত পাসপোর্ট না থাকলেই নাগরিকদের দেশে ফেরার জন্য এ ধরনের ট্রাভেল পাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের পনের মাস পরে এসে তারেক রহমানের দেশে ফেরার জন্য পাসপোর্টের বদলে ট্রাভেল পাসের প্রসঙ্গ আসছে কেন- সেটিও অনেকের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়া সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে আটক হয়ে আঠারো মাস জেলে থাকার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেয়েছিলেন তারেক রহমান। পরে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি।

তারেক কি বাংলাদেশি নাগরিক নন?
তারেক রহমানের পাসপোর্ট নিয়ে ২০১৮ সালে তখনকার আওয়ামী লfগ সরকারের তোলা এক বিতর্কের জের ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির ওই বছরের এপ্রিলে বিবিসি  বাংলাকে বলেছিলেন, ২০১২ সালে তারেক রহমান ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যেই সেটি গৃহীত হয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে তারেক রহমান দেশ ছেড়ে লন্ডনে যাওয়ার পর বিএনপির তরফ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছিল যে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন। কিন্তু এখন আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের ১৫ মাস পর আবার পাসপোর্ট ইস্যু আলোচনায় ফিরে এসেছে বিদেশ উপদেষ্টার ট্রাভেল পাস সংক্রান্ত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। তারেক রহমানের বাংলাদেশি বা অন্য দেশের পাসপোর্ট আছে কি-না সেটি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি তার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কি-না তাও পরিষ্কার না। তবে আওয়ামী লিগের আমলে তখনকার সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিলো, তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। যদিও বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে।  শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বিএনপি বারে বারে অভিযোগ করত, আওয়ামী লিগ সরকারের প্রতিহিংসার ভয়ে তারেক দেশে ফিরতে পারছেন না। তখন দুর্নীতির একাধিক মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। এমনকী শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল।‌

Advertisement

 এখনো ভোটার হননি
বাংলাদেশে  আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনের জন্য বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে তারেক রহমানেরও নামও আছে। কিন্তু সোমবার নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন তারেক  এখনো ভোটার হননি। যদিও বাংলাদেশে ভোট দেওয়ার জন্য যেমন ভোটার হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। আবার ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায় না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভোটার হয়েছেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হয় ইসি সচিবকে। জবাবে তিনি বলেন,  তারেক রহমান এখনো ভোটার হননি।  প্রেস ব্রিফিংয়ে  মি. আহমেদ বলেছেন, 'বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হননি। তবে ইসি সিদ্ধান্ত মিলে তিনি আগামী নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। আইনগতভাবে ইসির এই এখতিয়ার আছে।' কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিএনপির দিক থেকেও নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি অনুরোধ করা হয়েছিলো যে তারেক রহমান যেন দেশে ফেরার পর ভোটার হওয়ার সুযোগ পান। রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান চলতি বছরের মে মাসে লন্ডন থেকে দেশে আসার পর ভোটার তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

তারেক কি বিএনপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন? 
খালেদা জিয়া বহু বছর হল অসুস্থ। বাংলাদেশের তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অশীতিপর খালেদা এ যাত্রায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার কোনও সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। যদিও তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব এতটাই যে বিএনপি খালেদাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রে মনোনয়ন দিয়েছে। ‌নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা তারেক জিয়ারও। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, মায়ের এমন গুরুতর অসুস্থতার সময় দেশে ফিরতে না পারা তারেক জিয়া কি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন? তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে যে মহলের আপত্তি তারা কি বিএনপি'র এই সেকেন্ড ইন কমান্ডকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে?  গত মাসেই দেশে ফেরার কথা ছিল তারেকের। বিএনপি ইতিমধ্যে তাঁকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দল ক্ষমতায় এলে তারেক প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন ঘোষণাও বিএনপির তরফে করা হয়েছে। তারেকের দেশে ফিরতে না পারা নিয়ে আলোচনায় ঘুরেফিরে আসছে ১৭ বছর আগে ২০০৮-এ তাঁর দেশত্যাগের প্রসঙ্গ। সেই সময় তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করেছিল দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ‌ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। অভিযোগ, মায়ের প্রধানমন্ত্রিত্বের‌ সুযোগ নিয়ে তারেক ঢাকার হাওয়া ভবনে সমান্তরাল প্রশাসন খুলে বসেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের বিরুদ্ধে তোলাবাজির গুরুতর অভিযোগও ওঠে। গ্রেফতার করে তারেককে সেনা হেফাজতে রাখা হয়। সেখানে তাঁর ওপর গুরুতর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছিল বলে দেশ ছাড়ার পর অভিযোগ করেছিলেন তারেক। ‌


 

POST A COMMENT
Advertisement