হিংসার আগুনে নতুন করে জ্বলছে বাংলাদেশ। রবিবার রাতে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় এবার ফেসবুকে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী । চঞ্চল নিজের পোস্টে লিখেছেন, "পুড়ছে মাতৃভূমি…..আজ পুড়ছে অসহায় কেউ,কাল পুড়বে তুমি….."
সহিংসতা গত কয়েকদিনে ছড়িয়েছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনীসহ অন্য অঞ্চলে। এবার এর রেশ ছড়াল রংপুরেও। যার সূত্রপাক হয়েছিল কুমিল্লায় দুর্গামণ্ডপে তাণ্ডবের ঘটনায়। দশমীর দিন বাদ যায়নি ইসকন মন্দিরও। এই নিয়ে আগেও কলম ধরেছিলেন চঞ্চল। নিজের ওয়ালে লিখেছিলেন, “বিজয়া কতটা শুভ ছিল….বলার কোন অপেক্ষা নেই!!এভাবেই বিসর্জন হচ্ছে মানবতার….মানুষরূপী অমানুষগুলো ধর্ম এবং শান্তি দুটোই ধ্বংস করতে বদ্ধ পরিকর….মানুষ বাঁচলে ধর্ম বাঁচবে,পৃথিবী বাঁচবে…”।
বাংলাদেশের টেলিভিশন ও ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে এর আগেও নিজের ধর্মীর পরিচয় নিয়ে কটূ্ক্তি শিকার হতে হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবসে মা-কে আগলে একটি মিষ্টি ছবি নিজের অফিসিয়্যাল ফেসবুক পেজের প্রোফাইল পিকচার বানিয়ে ফেলেন অভিনেতা। ভিনেতার মায়ের সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাখা-পলা দেখেই অভিনেতার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে একের পর এক কটূক্তি ভেসে এসেছিল সেই সময়ে। যার কড়া জবাব দিয়েছিলেন চঞ্চল।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন লেখিকা তললিমা নাসরিনও। বাংলাদেশে ইসকন মন্দিরে হামলা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জাহির করেছেন তসলিমা নাসরিন। এই ঘটনার জন্য তিনি শেখ হাসিনার সরকারকেই দায়ী করেছেন। সে দেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নষ্ট হওয়ার জন্য আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকেই। এমনকি, সোশ্যাল মিডিয়ায় তসলিমা এও ব্যাখ্যা করেছেন যে কিভাবে জেহাদি কার্যকলাপ রোখা যায়।
রংপুরে হিন্দু গ্রামে একের পর এক বাড়িতে আগুন দেওয়া নিয়েও সরব হয়েছেন তসলিমা।
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ সরব হয়েছেন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম পরিচালক মহম্মদ সারওয়ার ফারুকী। ফেসবুকে একটি বড় পোস্ট করেছেন তিনি। লিখছেন, “এখন আমরা কি করতে পারি? ঘটনা যা যা ঘটেছে সেটা ঠিকঠাক তদন্ত করে সবার সামনে তুলে ধরা। দ্রুততার সাথে এই হামলার ঘটনাগুলার সাথে যারা যারা জড়িত তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। আগামীতে যেনো এইরকম কিছু না ঘটে তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়ার সেটা নেয়া।” তিনি আরও যোগ করেন, “তবে সবচেয়ে বেশী দরকার যেটা সেটা হচ্ছে, প্রত্যেকেই যার যার জায়গা থেকে এই ঘটনার নিন্দা করা। হিন্দু বন্ধু এবং প্রতিবেশীকে জানানো, তুমি একা নও! এখন তাকে একা বোধ না করতে দেয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ! এই সময় এক জগতবিধ্বংসী ক্ষোভ-অভিমান চেপে বসে। তার হাতটা চেপে ধরে বলি চলেন, ইউ আর নট অ্যালোন।”
এখানেই থামেননি ফারুকী, তিনি ঘটনার প্রতিবাদ করে আরও লেখেন, “অন্য দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানকে অত্যাচার করলে আমাদের হৃদয় যেমন ব্যথিত হয়, নিজের দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু বা অন্য কেউ অত্যাচারিত হলেও আমাদের হৃদয় যেনো সেটা একই ভাবে উপলব্ধি করতে পারে, আল্লাহ যেনো আমাদের এই তৌফিক দান করেন।” রংপুরের ঘটনা নিয়েও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি।
প্রতিবাদে সরব হয়েছেন চিত্রশিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতিও। দুর্গামণ্ডপে হামলার ঘটনাকে কড়া ভাষায় নিন্দা করে করেছেন একের পর এক পোস্ট। বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের এই বিষয়ে নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
নিজের কবার ছবিও বদলে দিয়ে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
এবারের পুজোতে বাংলাদেশে রয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ঘরণী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। তিনিও ইনস্টাগ্রামে বার্তা দিয়েছেন।
এদিকে দুর্গাপুজোয় বাংলাদেশে হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে বর্ণনা করেছেন সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গত বুধবার থেকে কুমিল্লায় হামলা শুরু হয়। সেখানে হওয়া সাম্প্রদায়িক হামলায় এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় প্রমাণ-সহ জনসমক্ষে সবকিছু প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।