অশান্ত বাংলাদেশ। সোমবারই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকেই দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের বীভৎস চিত্র। সোমবার থেকেই কার্যত চরমে উঠেছিল বাংলাদেশের আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে পার্লামেন্ট সব জায়গাতেই বিক্ষোভকারীদের দৌরাত্ম্য দেখা গেল। বিক্ষোভকারীদের এই বর্বরতা দেখে বাংলাদেশবাসী রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কাউকে ছাড়ছেন না। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি, ক্রিকেটার, বিনোদন জগতের মানুষ সকলেই বাড়িতেই হামলা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে আরও এক দুঃসংবাদ শোনা যায় যে বাংলাদেশের চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তাঁর ছেলে অভিনেতা শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পিটিয়ে হত্যা সেলিম খান-শান্ত খানকে
সেলিম খান ছিলেন শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার। তাঁর সঙ্গে টলিউডের দেব, অঙ্কুশ, বনিদের যোগাযোগ ছিল। টলিউডে সেলিম খানের কিছু কাজ করারও কথা ছিল। এছাড়া শান্ত খানের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন কৌশানী ও শ্রাবন্তী। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সোমবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় নাকি বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে এসে জনরোষের মুখে পড়েন তাঁরা। সেখান থেকে কোনও রকমে রক্ষা পেলেও বাগাড়া বাজারে এসে জনতার মুখোমুখি হন। সেখানেই গণপিটুনিতে নিহত হন সেলিম খান ও তাঁর ছেলে শান্ত খান। শান্তর সঙ্গে কৌশানীর পরবর্তী ছবি প্রিয়া রে। যার সমস্ত শ্যুটিং সারা হয়ে গিয়েছে। অপেক্ষা শুধু মুক্তির। কিন্তু কবে তা মুক্তি পাবে কেউ জানে না।
রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলা
অপরদিকে, জলের গানের রাহুল আনন্দের বাড়িতেও হামলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শোনা যাচ্ছে, তাঁর ছোটবেলা থেকে এখনও পর্যন্ত বানানো প্রায় তিন হাজার বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে তীব্র প্রতিবাদ করা হচ্ছে।
মাশরাফি মুর্তাজার বাড়িতে আগুন
সোমবার বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন মাশরাফি মুর্তাজার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুর্তাজা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগের সংসদ সদস্যে। এ বছরের সাধারণ নির্বাচনে তিনি টানা দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছিলেন। তিনি খুলনা বিভাগের নড়াইল-২ লোকসভা আসন থেকে জয়ী হন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আন্দোলনকারীরা নড়াইলে মুর্তাজার বাড়িতে পৌঁছে ভাঙচুর শুরু করে দেয়। পরে বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ২০১৮ সালে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধান আওয়ামী লিগে যোগ দেন।
প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও লুটপাট
ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতেও লুটপাট চালায় উত্তেজিত জনতা। এছাড়াও রমনা এলাকার পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতেও বিক্ষোভকারীরা ভাঙচুর চালায়। এই দুই বাড়ি থেকে বিক্ষোভকারীরা আসবারসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলে শোনা গিয়েছে। এই দুই জায়গাতেই কোনও সুরক্ষাকর্মীকে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের আরও এক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও এসপির বাড়িতে হামলা চলানো হয়।
যশোরের হোটেলে আগুন
সোমবার যশোরের একটি হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা, যেখানে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৮৪ জন আহত হয়েছেন। এই হোটেলটি যশোর জেলার আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী শাহীন চাকলাদের বলে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসক আবরারুল ইসলাম আগুন লাগিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যশোর জেনারেল হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, শহরের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগের আনন্দ উদযাপন করছেন।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশে
সোমবার শেখ হাসিনা তাঁর বাসভবন ছেড়ে চলে যাওয়ার পরই বিক্ষোভকারীরা তাঁর বাসভবন দখল করে সেখানে অবাধে ভাঙচুর ও লুঠপাট চালায়। ফ্রিজ খুলে খাবার খেয়ে নেওয়া থেকে হাসিনার বিছানায় শুয়ে থাকতেও দেখা যায় বিক্ষোভকারীকে। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের পর বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে ঢুকে সেখানেও ভাঙচুর চালায়। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা সরকারের অনেক মন্ত্রীর বাড়িতেও হামলা হয়েছে, দলীয় কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা এখানেই থেমে থাকেননি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবর রহমানের সরকারি বাড়ি বঙ্গবন্ধু ভবনে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুর মূর্তিও ভাঙে উত্তেজিত জনতা। বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। রাস্তায় পুলিশ নেই। এমনকি বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড সেনাদেরও ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারা ডিউটিতে নেই। বাংলাদেশে এখন অন্তর্বতী সরকার গঠন করার জন্য আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ সেনার দখলে এখন গোটা দেশ।