বাংলাদেশের মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুটি বর্তমানে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছে। রবিবার বিকেল পর্যন্ত শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে সিএমএইচের চিকিৎসক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিশুটির চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে বাংলাদেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। এই গুরুতর বিষয়ে এবার মুখ খুললেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, “ক্ষমতায় এসেছেন এক জন সুদখোর, জঙ্গিনেতা ইউনূস।” তাঁর বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারী নিরাপত্তা এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা।
রবিবার মধ্যরাতে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ সমাজমাধ্যমে একটি অডিয়োবার্তা প্রকাশ করে। প্রায় ৯ মিনিটের সেই অডিয়োতে হাসিনা নারী নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন। বক্তব্যের শুরুতেই হাসিনা বলেন, “মেয়েরা অনেকেই স্লোগান দিয়েছে আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য। আমায় বিদায় দেওয়ার পর বাংলাদেশের কী অবস্থা দেখুন। আজ মেয়েদের সম্মান নেই। বর্তমান আমলে মেয়েরা কী পোশাক পরবে, না পরবে কিংবা বাড়ি থেকে বেরোবে কি না, তা স্থির করে দেওয়া হয়।” আওয়ামী লীগ আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে হাসিনা বলেন, “আমরা নারী নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন এনেছিলাম। অপরাধীদের নাম যাতে প্রকাশ্যে আসে, তা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি কঠোর সাজার বন্দোবস্ত রেখেছিলাম।” বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে আক্রমণ করে হাসিনা বলেন, “ইউনূস নারী ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের কথা বলছেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে কোথায়?” বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত জুলাই-অগস্টে আন্দোলন চলার সময়েও তাঁর সরকার সহনশীল থেকে আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছিল। কিন্তু ইউনূসের আমলে কেউ আন্দোলন করতে পারে না।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে হাসিনা বলেন, “ইউনূস নারী ক্ষমতায়ন এবং দারিদ্র বিমোচনের কথা বলছেন। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে কোথায়?” হাসিনা আরও বলেন, গত জুলাই-অগস্ট মাসে চলা আন্দোলনের সময় তাঁর সরকার সহনশীল ছিল এবং আন্দোলনকারীদের কথা শুনেছিল। কিন্তু ইউনূসের শাসনে জনগণের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময়ে একটা মেয়েকেও কেউ বেইজ্জত করেনি। কোনও মানবাধিকার লঙ্খন হয়নি। ইউনূস মানবাধিকার লঙ্খন করেছেন। এখন মেয়েরা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পায়।
বাংলাদেশে সম্প্রতি একাধিক ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। মাগুরায় আট বছরের এক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্ট ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নারীর স্বাধীনতা নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা শোনান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। তাঁর আমলে বাংলাদেশে যে নারীনিগ্রহ রমরমিয়ে চলছে, কার্যত তাও স্বীকার করে নেন তিনি। ইউনূস বলেন, 'সম্প্রতি নারীদের ওপর যে জঘন্য হামলার খবর আসছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। এটি নতুন বাংলাদেশ-এর যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তার সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা এই নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের সব শক্তি প্রয়োগ করে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।' অর্থাৎ - তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে বাংলাদেশে মহিলাদের অবস্থা ক্রমশ শোচনীয় হয়ে উঠছে। তাঁরা হামলা, আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রসঙ্গত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-সহ বিভিন্ন জায়গায় ইদানীংকালে বাংলাদেশে যে নারীনিগ্রহ বেড়েছে, তা সেদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাই বলছেন।