বাংলাদেশের সেই হাড়হিম করা ঘটনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের ভালুকায় হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্য়া করে ধর্মান্ধ দুষ্কৃতীরা। সেই অভিযোগে কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ RAB। বৃহস্পতিবার রাতে পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার বাইরে খুন হন দীপু। প্রকাশ্য়ে তাঁকে নগ্ন করে জ্বালিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, ইসলাম ধর্ম নিয়ে যে অবমাননার অভিযোগ ওই যুবকের বিরুদ্ধে উঠেছিল, সেরকম কোনও প্রমাণ মেলেনি। এদিকে বছর তিনেক আগে বিয়ে করেছিলেন দীপু। দেড় বছরের এক সন্তানও রয়েছে। কিন্তু এখন তাঁর পরিবার অর্থৈ জলে। কীভাবে সংসার চলবে, কে নিরাপত্তা দেবে, এখনও জানে না ওই হিন্দু যুবকের পরিবারের সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, মৌলবাদীদের অত্যাচারের মুখে দমে যায়নি মৃতের পরিবার। তাঁর ভাই দীপু ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। India Today-কে Exclusive সাক্ষাৎকার দেন তিনি।
প্রশ্ন : ঘটনার সময় আপনি কোথায় ছিলেন, আপনার ভাই কোথায় ছিলেন, সেখানে কী হয়েছিল?
উত্তর : আমরা বাড়িতেই ছিলাম। ভাই কারখানায় ছিল। সেদিন কোম্পানিতে কী হয়েছিল তা জানা নেই। তবে দীপু ওখানে কারখানার সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করত।
প্রশ্ন : স্থানীয় প্রশাসন বা বাসিন্দারা কি আপনাদের সাহায্য করেছেন?
উত্তর : হ্য়াঁ। পুলিশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এলাকার অনেকে সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা শুধু দেখতে আসছেন। কিন্তু সত্যিটা হল, আমার ভাই আর ফিরে আসবে না। ওকে তো খুন করা হয়েছে। ও আর দুনিয়াতে নেই। এটাই সত্যি।
প্রশ্ন : আপনার ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি অভিযোগ করা হয়েছিল, সেগুলো সত্যি বলে কি আপনি বিশ্বাস করেন?
উত্তর : সব অভিযোগ মিথ্যা। অনেকে বলেছিল, দীপু নাকি কারখানায় অনুপযুক্ত কিছু বলেছিল। তবে আমরা তা বিশ্বাস করি না। এক সেকেন্ডের জন্যও করি না। কারণ, ও এমন ছেলে ছিল না। ও কোনও ধর্মকে অবমাননা করতে পারে না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, ন্যায় বিচার পাবেন? আপনার প্রাথমিক দাবী কী?
উত্তর : আমরা ন্যায় বিচার চাই। যারা আমার ভাইকে খুন করেছে তাদের ফাঁসি চাই। শুধু ফাঁসি। অন্য কোনও শাস্তি পেলে হবে না।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ সরকার কি আপনাদের সাহায্য করছে?
উত্তর : আমি নিশ্চিতভাবে সেটা বলতে পারব না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হয়তো করেছে।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি থেকে ঘটনাস্থল কতদূরে? সেই সময় আপনার ভাইয়ের সঙ্গে কেউ ছিল?
উত্তর : আমাদের বাড়ি সিংপাড়া কান্দায়। আর ঘটনাস্থল প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে।
প্রশ্ন : ঘটনার সময় আপনার ভাই কী করছিলেন?
উত্তর : ও কারখানার ফ্লোরেই ছিল।
প্রশ্ন: ঘটনার পর থেকে কি আপনারা আতঙ্কিত?
উত্তর : আমরা ভয় পাই না। কেন পাব? স্থানীয় বাসিন্দার আমাদের সঙ্গে আছে।
প্রশ্ন : : ইতিমধ্যেই কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতিতে আপনি কি সন্তুষ্ট?
উত্তর : যাকেই ধরা হোক না কেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা উচিত। তবেই আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে, আর কেবল তখনই আমরা শান্তি পাব।
উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার বিকেলে দীপুকে খুনের পর ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় দেহ। তাতে আগুন নিয়ে উল্লাস করতে থাকে একদল মৌলবাদী। সেই ভিডিও দেখে শিউরে ওঠে গোটা বিশ্ব।