করোনা সংক্রমণ বাড়ায় ঢাকায় ফের নতুন করে শুরু হয়েছে লকডাউন। যার ফলশ্রুতি তালা পড়েছে ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লাতেও। বাংলাদেশে মোঘল আমলের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন বলতে এই লালবাগ কেল্লা। যাতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। স্বাভাবিক সময়ে প্রায় প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণয় মুখরিত হয় ঢাকার লালবাগ এলাকার এই দুর্গটি।
লালবাগ কেল্লার ইতিহাস
লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে। তৎকালীন মুঘল সম্রাট আজম শাহ এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যদিও আজম শাহ খুব কম সময়ের জন্যেই মুঘল সম্রাট হিসেবে ছিলেন। তবুও তাঁর অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এই অসাধারণ কাজটি শুরু করেন। উল্লেখ্য আজম শাহ ছিলেন মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেবের পুত্র আর সম্রাট শাহ জাহানের নাতি।
প্রাচীন এই কেল্লাতে সুরঙ্গ পথও আছে। লোক মুখে শোনা যায় যে আগে নাকি সুরঙ্গ পথগুলোতে যাওয়া যেতো, তবে এখন আর যাওয়া যায়না। প্রসঙ্গত সুরঙ্গ পথে যাওয়ার কথাটি নিতান্তই শোনা কথা, এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।লালবাগ কেল্লায় সর্বসাধারণের দেখার জন্যে একটি জাদুঘর রয়েছে, যা পূর্বে নবাব শায়েস্তা খাঁ-এর বাসভবন ছিল। আর এখান থেকেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। জাদুঘরটিতে দেখার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। মুঘল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবির দেখা মিলবে সেখানে, যেগুলো দেখলে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। শায়েস্তা খাঁ-এর ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্র সেখানে সযত্নে রয়েছে। তাছাড়া তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সেসময়কার প্রচলিত মুদ্রা ইত্যাদিও রয়েছে।
হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং গায়ক জোসেফ গর্ডন- লেভিট। সম্প্রতি ‘ইনসেপশন’ তারকা তার নতুন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশি ভক্ত এবং শিল্পীদের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। গত মাসে জোসেফ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি ছবি আপলোড করেন। তাঁর শেয়ার করা ছবিটিতে লালবাগ কেল্লা দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি হয়তো এমন কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন, যেখানে লালবাগের বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
তিনটি স্থাপত্যের মধ্যে অন্যতম তিন গম্বুজওয়ালা দূর্গ মসজিদ বা শাহী মসজিদ৷ মসজিদটির নির্মাণকাল ১৬৭৮-৭৯ খ্রিষ্টাব্দ৷ মুঘল আমলের মসজিদের আদর্শ উদাহরণ এই স্থাপত্যটিতে এখনো নামাজ পড়া হয়৷ কেল্লার অন্যতম আকর্ষণ হলো পরী বিবির সমাধি৷ সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮৪ সালে তাঁর কন্যার স্মরণে মনোমুগ্ধকর এ স্থাপত্য়টি নির্মাণ করেন৷ চতুষ্কোণ এ স্থাপনাটির নয়টি কক্ষ মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রংয়ের ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অলংকৃত করা৷ দর্শনার্থীদের অবশ্য এর ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই। কেল্লাটির বিভিন্ন স্থাপত্যের ছবি ছিল পুরোনো দিনের কাগজের নোটে৷ যেমন বাংলাদেশের ১০০ টাকার কাগজের নোটে ছিল কেল্লার দক্ষিণ পাশের প্রধান ফটকের ছবি আর ২০ টাকার নোটে ছিল পরী বিবির সমাধির ছবি৷
ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন লালবাগ গতবছর করোনার কারণে প্রায় ছয় মাস বন্ধ ছিল৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ফের খোলা হয়েছিল কেল্লা। সপ্তাহে ছদিন খোলা রাখা হচ্ছিল এই ঐতিহাসিক নিদর্শন। তবে নতুন করে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ফের লকডাউন বাংলাদেশে। তাই আপাতত লালবাগেও নো এন্ট্রি।