ইলিশের মরশুম চলছে। কিন্তু এই ভরা মরশুমেও ইলিশ মিলছে না বাংলাদেশের বাজারে। বাংলাদেশের , মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন দূষণের কারণে ভরা মরশুমেও নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ মিলছে না। তিনি বলেন, এবারের মরশুমে ৩৮ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত ইলিশ আহরণ কম হয়েছে। নদীর নাব্যতা কমা, আবহাওয়া পরিবর্তনসহ নানা কারণে এটা হয়েছে।
প্রথম আলোর রিপোর্টে অনুসারে বাংলাদেশে এই সময় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগরে বৃষ্টির ধরন পাল্টে গেছে এবং ঘন ঘন নিম্নচাপের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে সাগরে আগের মতো ইলিশও আসছে না। গত কয়েক বছরে ক্রমেই ইলিশ কমছে বলে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর জেলেদের কথা থেকে জানা যাচ্ছে। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে, ইলিশের আহরণ দিন দিন কমছে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে এই মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন ও ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। আর চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত দুই মাসে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৬৭ মেট্রিক টন।
এদিকে সামনেই বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এমন উৎসব মুখর দিনে বাঙালির হেঁশেলে ইলিশ মাছ থাকবে না তা কি কখনো হয়। পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিরা ইলিশ মাছ বলতেই বোঝে পদ্মার সুস্বাদু রুপোলি ইলিশ। গত কয়েক বছর ধরে ঠিক পুজোর আগেই পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির পাতে পড়েছে বাংলাদেশের সুস্বাদু ইলিশ। কিন্তু এবার এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের ইলিশের দেখা মেলেনি পশ্চিমবঙ্গে। এবার পুজোয় বাংলাদেশের সুস্বাদু রুপোলি ইলিশের চাহিদা রয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানের বাজারেও। বাংলাদেশের ইলিশ কলকাতার বাজারে না আসলেও দুর্গাপুজোর আগে কলকাতার বাজারে গুজরাতের ইলিশের দেখা মিলছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে বড় অংশের ইলিশ আসছে গুজরাত থেকে যেখানে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ মাছ ধরা পড়েছে। যদিও এই ইলিশের স্বাদ বাংলাদেশের ইলিশের চেয়ে অনেকাংশেই কম। গুজরাত থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন ইলিশ ভর্তি বিশেষ ট্রাক ঢুকছে হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারে। বাংলাদেশের ইলিশের অভাবে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা এখন গুজরাতের ইলিশ দিয়েই তাদের রসনা তৃপ্তি করছেন। তবু এপার বাংলার বাঙ্গালিদের আশা পুজোর ঠিক আগেই বাংলাদেশের উপহার হিসেবে ইলিশ আসবে।
তবে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, কলকাতার বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের তরফে জানা যাচ্ছে, দুর্গাপুজোর আগেই ভারতে আসছে তিন হাজার মেট্রিক টন পদ্মার ইলিশ। উপ দূতাবাস সূত্রে আরও জানা গেছে যে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ইলিশ পাঠানোর ব্যাপারে সম্মতি জানিয়েছে। আর তা কলকাতা সংলগ্ন পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। পশ্চিমবঙ্গের ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সেক্রেটারি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ গত অগাস্ট মাসে চিঠি দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। চিঠিতে পাঁচ হাজার টন ইলিশ আমদানির জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। জানা যাচ্ছে, সেই আবেদনের পর তিন হাজার টন ইলিশ মঞ্জুর করেছে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়। কিন্তু তার আগেই গুজরাত থেকে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ আমদানি করেছেন হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা।