বাংলাদেশে অশান্তির ঘটনায় হাসিনা সরকারের ভূমিকা নিয়ে আঙুল তুলেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ফেসবুকে একাধিক পোস্টে সেই দেশের সরকারের সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইন্ডিয়া টুডে-র কনসাল্টিং এডিটর রাজদীপ সরদেশাইকে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, হিন্দুদের উপর আক্রমণের জন্য শুধুমাত্র প্রান্তিক গোষ্ঠীই দায়ী। তবে তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। আপনার প্রতিক্রিয়া...
তসলিমা : আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদার। কিন্তু যখন আমি দেখি অ-মুসলিমদের উপর হামলা হচ্ছে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না, তখন আমার মনে সন্দেহ তৈরি হয়। তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, প্রান্তিক গোষ্ঠী এই হামলা করছে। অনেকে ইসলামে বিশ্বাস করে এবং তালেবানকেও সমর্থন করে। হিন্দু এবং বৌদ্ধরা এদেশে বহুবার আক্রমণের শিকার হয়েছে। অথচ কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, হিন্দুদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার সাতশোর মতো হামলা হয়েছে। অথচ কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি। ভারতের অনেকেই বিশ্বাস করেন (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ভালো এবং ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন। কিন্তু, আমি তা মনে করি না। শেখ হাসিনা শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, তাই ভারতে অনেকেই তাঁকে ভালো মনে করে। তিনি ইসলামপন্থী যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন এটা ঠিক। কিন্তু, এর প্রধান কারণ, তারা হাসিনার বিরুদ্ধে ছিল।
প্রশ্ন : হাসিনা বলেছেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ভারত কি শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করবে না তাহলে? হাসিনা কি তাহলে মিথ্যা বলছেন?
তসলিমা : প্রতিবারই হাসিনা একথা বলেন। গত ১০-১৫ বছরে এত বাড়ি, দোকান ও মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে যাতে হিন্দুরা ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান। দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। ব্লগারদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তখনও হাসিনা চুপ ছিলেন। তিনি আসলে ইসলামপন্থীদের সাহায্য করেছেন। তিনি মাদ্রাসার ডিগ্রিগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমতুল্য করেছেন।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে যদি অধিকাংশ মানুষ ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তাহলে মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো কঠিন কেন?
তসলিমা : কারণ হাসিনা কিছু বিপজ্জনক আইন বানিয়েছেন। আপনি যদি তাঁর সমালোচনা করেন, তাহলে আপনি জেলে যাবেন। অথবা আপনাকে খারাপ সময় কাটাতে হবে। জিহাদি এবং ইসলামপন্থীদের ভয়ে প্রগতিশীলরা দেশ ছেড়ে চলে যায়। যারা ইসলামকে সংস্কার করতে চায় বা দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ করতে চায়, তারা হাসিনাকে ভয় পায়। তিনি ক্ষমতায় এসে ১৯৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু ইসলামপন্থীদের খুশি করার জন্য তিনি তা করেননি।
প্রশ্ন: আপনি কি বিশ্বাস করেন, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পিছনে ষড়যন্ত্র আছে?
তসলিমা : আসলে এই তরুণরা যারা হিন্দু মন্দির এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে তাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়, ইসলামই সর্বোত্তম ধর্ম এবং আল্লাহই প্রকৃত ঈশ্বর।