বাংলাদেশের দিকে বড় পদক্ষেপ ভারত সরকারেরমৌলবাদীদের উস্কানিতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষ চরমে পৌঁছিয়েছে। তাতে পরোক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই আবহেই ভারত সরকার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (IVAC) বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত IVAC হল সকল ভারতীয় ভিসা পরিষেবার প্রধান কেন্দ্র। এক বিবৃতিতে IVAC বলেছে, 'বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা জানাতে চাই যে IVAC জেএফপি ঢাকা আজ (বুধবার) দুপুর ২ টোর পর বন্ধ থাকবে।'
IVAC জানিয়েছে যে বুধবারের জন্য নির্ধারিত সকল আবেদনকারীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পরবর্তী তারিখে পুনঃনির্ধারণ করা হবে। এর আগে, ভারতের বিদেশমন্ত্রক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে এবং কিছু চরমপন্থী উপাদানের দ্বারা ঢাকায় ভারতীয় মিশনের আশেপাশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য, 'আমরা আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার কূটনৈতিক দায়িত্ব অনুসারে বাংলাদেশে মিশন এবং পদগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। 'আরও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের গভীর উদ্বেগ রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে।
ভারতের 'সেভেন সিস্টার্স' হিসেবে পরিচিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দেওয়ার একদিন পরই এই ঘটনা ঘটল। এমন বক্তব্য ভারতের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে সেখানে কর্মরত দেশেপ কূটনৈতিক মিশন এবং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে চূড়ান্ত অস্থিরতার মধ্যে ঢাকায় অবস্থিত হাইকমিশন থেকে বহু কর্মী এবং পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেয় ভারত। কেবলমাত্র জরুরি কর্মীদের সেখানে রাখা হয়েছে। এর পরে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্থান-পতন অব্যাহত।
ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মহম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাকে ভারত বিরোধী চরমপন্থী গতিবিধির কথা জানানো হয়েছে, যারা ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলে, 'বাংলাদেশ থেকে যে মিথ্যে ভাষ্য তৈরির চেষ্টা করছে চরমপন্থীরা, তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্য়ান করছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে, সেখানকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনও তদন্তের নির্দেশও দেয়নি, সেই সক্রান্ত কোনও তথ্যপ্রমাণও দেওয়া হয়নি ভারতকে। বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড় ও বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাশে ছিল ভারত, বাংলাদেশের উন্নয়নের সমর্থক থেকেছে ভারত। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতাবস্থার পক্ষে আমরা। সেখানে শান্তিপূর্ণ ভাবে, অবাধ, সুষ্ঠ,সার্বিক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে আমরা। আশা করি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করবে।'
উল্লেখ্য, বেশ কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে ভারতবিরোধী মন্তব্য উড়ে আসছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস পর্যন্ত ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ নিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে ইদানীংকালে বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠতা যত বেড়েছে, ততই ভারতবিরোধী মানসিকতা উন্মোচিত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দেয়। ভারত বিরধী শক্তিগুলিকে আশ্রয় দেওয়া, তাদের সহযোগিতা করার কথা বলে তারা। 'ইনকিলাব মঞ্চ' থেকে হাসনত আব্দুল্লা বলেন, 'ভারত থেকে সেভেন সিস্টার্স'কে আলাদা করা হবে। ভারতের ভূখণ্ড নিয়ে এই ধরনের হুমকি যে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না, তা জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি।