লেখক দীপ হালদারঅন্যতম বড় রাজনৈতিক আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ। শেখ হাসিনার দলকে বাদ দিয়েই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে বাংলাদেশে। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হতে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে আবার ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হলে হাসিনাকে নিজে উপস্থিত হতে হবে আদালতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হবে। যেটা শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সেটি করবেন না, ধরেই নেওয়া যায়। বর্তমানে দুজনেই রয়েছেন ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের আমলে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে বাংলাদেশের। ইসলামাবাদের কাছে এখন অবারিত দ্বার ঢাকা। ফেব্রুয়ারিতে যদি বাংলাদেশে ভোট হয়,তাহলে যে দুই মূল রাজনৈতিক দলের লড়াই, তা হল, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (BNP) ও জামাত ই ইসলামি। দুই দলই পাকিস্তানপন্থী।
জামাত এখন ঢাকায় কার্যত ছায়াশাসকের ভূমিকা নিচ্ছে
বাংলাদেশ নিয়ে সম্প্রতি বই লিখেছেন দীপ হালদার। বইটির নাম, 'Inshallah Bangladesh: The Story of an Unfinished Revolution'। Business Today-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ: দ্য স্টোরি অফ অ্যান আনফিনিশড রেভোলিউশন’-এর লেখক দীপ হালদার ব্যাখ্যা করলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ, কেন দেশের নাগরিক সমাজ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে সরে এসেছে, এবং কীভাবে জামাত এখন ঢাকায় কার্যত ছায়াশাসকের ভূমিকা নিচ্ছে।
BNP-র সম্ভাবনা, জামায়াতের উত্থান ও ভারতের উদ্বেগ
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছর সেখানে বিএনপি ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল বলে ধরেই চলছে আন্তর্জাতিক মহল। আওয়ামী লিগকে কার্যত রাজনৈতিক দৌড়ের বাইরে রাখা হয়েছে, আর দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর শেখ হাসিনা আপাতত ঢাকা ফিরবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
অনেক হিন্দু নারী একরাতে বারবার ধর্ষণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন
‘Inshallah Bangladesh: The Story of an Unfinished Revolution’ বইয়ের লেখক দীপ হালদার বিজনেস টুডেকে জানিয়েছেন, BNP ক্ষমতায় এলে ভারত আশা করবে এটি যেন 'নতুন BNP' হয়। কারণ ২০০১ সালের বিএনপি–জামাত সরকার বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ সময়। দেশজুড়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুঠ, সবই ঘটেছিল সেই সময়। সেই নির্যাতনের তদন্ত করেছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন। তাঁর নথিভুক্ত বিবরণ জানিয়েছে, অনেক হিন্দু নারী একরাতে বারবার ধর্ষণের শিকার হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন।
দীপ হালদার মনে করেন, আজ বিএনপি নিজেদের ভাবমূর্তি পাল্টাতে চাইছে। তারেক রহমান নিজে প্রতিদিন ফেসবুকে পোস্ট করে দলকে 'দায়িত্বশীল চেহারা' তুলে ধরতে বলছেন। কিন্তু একই সময়ে সালাফি প্রচারকদের জিহাদি উস্কানি সভায় বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি ভরসা কমাচ্ছে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে এ ধরনের ছবি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে আরও। তাঁর মতে, বাংলাদেশে এখন জামাতই কার্যত রাষ্ট্রের ভিতরকার সিস্টেম হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায় না থাকলেও একে একে তারা দখল করে ফেলেছে বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া, বিচারব্যবস্থা, আইনি প্রতিষ্ঠান, যা প্রশাসনের ভিত দুর্বল করে দিচ্ছে। ফলে যেই ক্ষমতায় আসুক, জামাতের প্রভাব চলবে।
এর পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে প্রকাশ্যেই। ভিসামুক্ত ভ্রমণ, নৌবাহিনীর আদানপ্রদান, এমনকী লস্কর জঙ্গিদের আনাগোনা, সব মিলিয়ে ঢাকায় পাকিস্তানি ছায়া সুস্পষ্ট। দীপ হালদারের কথায়, 'ভারতকে এখন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। সীমান্তের দুই দিকই হাইটেন্ড রিস্ক জোন হয়ে উঠছে। হিন্দুদের অবস্থাও অত্যন্ত সংবেদনশীল। খোলা মঞ্চে গণহত্যার ডাক দেওয়া হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে জোরপূর্বক ধর্মান্তর, মাজার বা সুফি সম্প্রদায়ের উপর হামলা, সবই চলছে। শেখ হাসিনা ছিলেন একমাত্র নেত্রী যিনি ১৯৭১ এর বাংলাদেশকে ধরে রাখতে পারতেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, দু’টিই কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়েছে।'