খালেদা জিয়াচিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ। প্রয়াত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি-এর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি আজ, মঙ্গলবার প্রয়াত হন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এখন সেখানে খালেদা পুত্র তারেক রহমান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে সংবাদ সংস্থা প্রথম আলো সূত্রে।
আর তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলাদেশে। এমন শোকস্তব্ধ পরিবেশে আরও একবার খালেদা জিয়ার জীবনের রেখাপথটা ঘুরে আসা যাক।
ছোটবেলা...
আজ যেই মানুষটিকে বেগম খালেদা জিয়ার নামে চেনেন সকলে, তাঁরই ছোটবেলার নাম ছিল খালেদা খানম পুতুল। তিনি ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেন দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া এলাকায়। তাঁর বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তাঁরা তিন বোন এবং দুই ভাই। জনাব ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
খালেদা একদম ছোট বয়সে মিশন স্কুলে পড়াশোনা করেন। ৫ বছরেই সেখানে ভর্তি হন। এরপর দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাশ করেন ১৯৬০ সালে। সেই বছরই তাঁর বিয়ে হয় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তখনই তাঁর নাম হয় খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া।
তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। পরবর্তী সময় তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন।
রাজনীতিতে প্রবেশ...
১৯৮১ সালে খালেদার জীবন এক কঠিন সময় আসে। সেই বছর ৩০ মে সামরিক অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান জিয়াউর রহমান। এরপরই খালেদার রাজনীতিতে প্রবেশ। তিনি ১৯৮২ সালে বিএনপি-তে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এরপরই তাঁর জীবন নতুন মোড় নেয়।
১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী
সালটা ছিল ১৯৯১। সেই বছরই প্রথমবারের জন্য নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। তারপর আবার ১৯৯৬ সালে তাঁর মাথায় চাপে একই দায়িত্ব। তবে সেই দফায় রাজনৈতিক চাপে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এরপর আবার তিনি ২০০১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব সামলেছেন।
তবে ২০০৭ সাল থেকে খালেদা জিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। এই সময় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তাঁকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এই সময় তিনি এক বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পান। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জিয়াকে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
তবে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকেই স্বাস্থ্যের অবনতি হয় তাঁর। এই সময় তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালের মার্চে মানবিক কারণে তাঁকে ছয় মাসের জন্য গৃহবন্দি করে মুক্তি দেওয়া হয়।
যদিও জুলাই অভ্যুত্থানের পর খেলা ঘুরে যায়। এই সময় হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপরই নতুন সরকার খালেদাকে সব মামলা থেকে মুক্তি দেয় নতুন সরকার। তারপরই ভোটে লড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন জিয়া। তবে সেই ইচ্ছে পূরণ হল না। আজ ৮০ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হলেন।