বাংলাদেশে গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সরকার আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বললেও বিএনপিসহ কয়েকটি দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানায়। নির্বাচনের সময় নিয়ে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতপার্থক্যও সামনে আসে। তবে লন্ডনে গত ১৩ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে শর্ত সাপেক্ষে আগামী বছর রমজান মাসের আগে (ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ) জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা জানানো হয়েছে। এর পর থেকেই বাংলাদেশে আলোচনায় এখন মূল বিষয় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
ভোটের ময়দানে বেগম জিয়া
প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশের সরাসরি নির্বাচনী মাঠে অনুপস্থিত বেগম খালেদা জিয়া। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেন বলেই বিএনপি সূত্রে খবর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, খালেদা জিয়াকে এবার বগুড়া, ফেনী ও দিনাজপুর- এই তিনটি আসনে প্রার্থী করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া-৬ অথবা ৭ আসন থেকে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত। বগুড়া-৭ আসনটি (গাবতলী-শাহজাহানপুর) প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি হওয়ায় এটি বরাবরই বিএনপির কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বগুড়া থেকে লড়বেন খালেদা?
বগুড়া দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে একাধিকবার এখান থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং প্রতিবারই জয়ী হয়েছেন। বিএনপির এক নেতা বলেন, বগুড়া আমাদের জন্য শুধু একটি আসন নয়, এটি আমাদের রাজনীতির প্রতীক। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ অথবা ৭ এবং দিনাজপুর জেলার একটি আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে পারেন। প্রসঙ্গত,বগুড়ার রাজনীতিতে বেগম জিয়ার অতীত প্রভাব ছিল শক্তিশালী। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয় পান। বিশেষ করে বগুড়া, ফেনী, ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের আসনগুলোতে তার জনপ্রিয়তা ছিল লক্ষণীয়। ফলে তার প্রত্যাবর্তন নতুন করে এসব এলাকায় নির্বাচনী সমীকরণে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রস্তুতি শুরু BNP-র
শোনা যাচ্ছে খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিক আসনে নির্বাচনে লড়তে পারেন। এছাড়া কেউই একাধিক আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামতে পারবেন না। জানা গেছে, তারেক রহমানের নির্দেশে ইতিমধ্যে কারা কোথায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তার একটি সম্ভাব্য তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকায় প্রায় ২০টি জেলায় জোটের শরিকদের জন্য আসন রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
খালেদা জিয়ার ভোট রেকর্ড
খালেদা জিয়ার অতীত নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি বগুড়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং চট্টগ্রামের আসন থেকে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়া ১৯৯১ সালে ঢাকার একটি আসন থেকে এবং ২০০১ সালে খুলনার একটি আসন থেকে ভোটে লড়েছেন তিনি। নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুধু জয়লাভ করাই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার ভোটের ব্যবধানও ছিল অনেক বেশি।
পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০১ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া প্রতিবারই পাঁচটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন এবং সবগুলো আসনে তিনি জয়লাভ করেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনেও খালেদা জিয়া প্রার্থী ছিলেন। এরপর ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনটিতে জয়ী হন। ২০১৪ সালে বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ২০২৪ সালের নির্বাচনও বর্জন করে বিএনপি। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০১৮ সালে তিনটি আসনে প্রার্থী হয়েও দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় নির্বাচন থেকে বাদ পড়তে হয় খালেদা জিয়াকে। তবে ২০২৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ সরকারের পতনের পর আদালতের রায়ে তার বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা খারিজ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, বর্তমানে তার নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়ে আর কোনও আইনি বাধা নেই। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।