বাংলাদেশে অরাজকতা অব্যাহত। আইন হাতে তুলে নিচ্ছে জনতাই। গত বছর অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশজুড়ে যে হিংসাত্মক ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা থামতেই চাইছে না। আর এই উত্তেজনায় ঘি ঢেলেছে দেশটির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পার্টি বিএনপি। যার নির্যাস, মারধর, হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে।
আরও একটি নিন্দার ও ফ্যাসিবাদী ঘটনা
প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এই ভাবে মারধরের চেষ্টা অন্তর্বর্তী ইউনূস সরকারের আমলের আরও একটি নিন্দার ও ফ্যাসিবাদী ঘটনা। রবিবার ঢাকার উত্তরা এলাকায় একদল জনতা চড়াও হয় দেশের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার ওপর। জানা গিয়েছে, ওই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই বিএনপি, অর্থাৎ খালেদা জিয়ার দল, হুদার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ভোটে কারচুপির অভিযোগে।
মামলার খবর ছড়াতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে
নুরুল হুদা ২০১৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান ছিলেন। শেখ হাসিনা তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। হুদার সময়েই ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। আর সেখানেই নাকি ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল— এমনই অভিযোগ করেছে বিএনপি। সেই সূত্র ধরেই ঢাকার এক আদালতে মামলাও দায়ের করেছে তারা। মামলার খবর ছড়াতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রাতেই একদল লোক চলে যায় হুদার উত্তরার বাড়ির সামনে। স্থানীয় মানুষ এবং পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তেজিত জনতা তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং তাঁর ওপর চড়াও হয়।
এই ঘটনায় পুলিশ হস্তক্ষেপ না করলে কী হত বলা কঠিন। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যাই। দেখি, বাড়ির সামনে উত্তেজনা। আমরা ওনাকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি।' হামলার পিছনে কে বা কারা রয়েছে, তাদের রাজনৈতিক যোগ আছে কি না— সে বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট হয়নি। পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।
আইন হাতে তুলে নিচ্ছে জনতা, চূড়ান্ত অরাজকতা
বিএনপির দাবি, ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল প্রহসনের মতো। সেই ভোটে আওয়ামী লিগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতলেও বিরোধীরা বারবার অভিযোগ করেছে, প্রশাসনের সাহায্যে ভোট লুঠ করা হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, সেই সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নুরুল হুদা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেননি। এই ঘটনার পর বাংলাদেশে প্রাক্তন সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। একজন প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি জনতার রোষের শিকার হন, তাহলে বাকিদের নিরাপত্তা কোথায়— তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে বিএনপির কয়েকজন নেতা এই হামলার ঘটনার সমালোচনা করে জানিয়েছেন, এটা জনতার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু একজন প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনারের ওপর সরাসরি হামলার ঘটনা দেশের গণতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।