ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামি লিগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামে অধিক পরিচিত। ২২ তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে ১৫ মার্চ ২০২৩ তিনি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। রবিবার সকালে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের সই করা মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামি লিগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।
আওয়ামি লিগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন, আর আওয়ামি লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ তা সমর্থন করেন। মনোনয়নপত্র জমার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দলের সভাপতি ও সংসদীয় দলের প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি পদে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনীত করেছেন। সাংবাদিকদের একের পর এক অনুরোধের মধ্যে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শুধু বলেন, “সবই আল্লাহর ইচ্ছা।”
সংসদে আওয়ামি লিগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হচ্ছেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। তফসিল অনুযায়ী রবিবার বিকেল ৪-টে পর্যন্ত মনোনপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪-টে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। রবিবার আর কেউ প্রার্থী না হলে যাচাই বাছাই শেষে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
আর একাধিক প্রার্থী থাকলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে ভোট হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২-টো থেকে বিকাল ৫টার মধ্যে।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। ৩৫০ আসনের সংসদে আওয়ামি লিগের সদস্য এখন ৩০৫। ফলে টানা দুই বারের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনই যে বঙ্গভবনে যাচ্ছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতিপূর্বে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায আইন মন্ত্রক কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্র লিগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুব লিগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারা বরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এক পুত্র রয়েছে এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ডঃ রেবেকা সুলতানা সরকারের প্রাক্তন যুগ্ম সচিব।