তাঁর পদত্যাগ নিয়ে সমস্ত জল্পনায় ইতি পড়েছে। জানা গিয়েছে, মোটেও পদ ছাড়ছেন না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সেনার শ্যেন দৃষ্টি আর দেশ জুড়ে ওঠা বিরোধী হাওয়ায় যেন ল্যাজে-গোবরে অবস্থা তাঁর। নিজের কোর্টে বল আনতে তাই শনিবার তড়িঘড়ি ম্যারাথন বৈঠকের ডাক দিলেন ইউনূস। প্রথমে জরুরি ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী ক্যাবিনেট বৈঠক এবং তারপর BNP এবং জামাতের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর সরকার, সেনা এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চলছে অসন্তোষ। এই নিয়েই উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের এক প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, 'উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মুহাম্মদ ইউনূস। তার আগে তিনি যোগ দেবেন ন্যাশনাল ইকনমিক কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে।'
এরপরই মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠক করবেন খালেদা জিয়ার BNP পার্টির প্রতিনিধি এবং জামায়-এ-ইসলামিদের সঙ্গে। দু'টি বৈঠক হবে যথাক্রমে শনিবার সন্ধে ৭টা এবং ৮টায়। অর্থাৎ এ যেন খানিকটা ম্যানেজ দেওয়ার চেষ্টা। আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, পদত্যাগের নাটক বুমেরাং হয়ে গেল ইউনূসের।
BNP মুখপাত্র বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টার অফিসের তরফে আমাদের বৈঠকে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিত নিয়ে আলোচনা হবে।'
জামাত নেতা সইদ আবদুল্লা এম তাহের বলেন, 'সরকার জানিয়ে দিয়েছে ডিসেম্বর থেকে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে। এই সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজন রয়েছে। পরিকাঠামোগত কী কী পরিবর্তন হতে চলেছে, সেটিও জানানো উচিত।'
যদিও ইউনূস সরকারের একজন মুখ্য অ্যাডভাইসর সইদা রিজওয়ানা বলেন, 'আমাদের তিনটি বড় দায়িত্ব রয়েছে। প্রত্যেকটিই যথেষ্ট কঠিন। শুধুমাত্র নির্বাচন করানোই আমাদের দায়িত্ব নয়। তার সঙ্গে সংস্কার এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠাও গুরুদায়িত্ব।'
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা নানা দাবি দাওয়া নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও আন্দোলন শুরু করেছে। ২২ মে, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন প্রথম শোনা যায়। উপদেষ্টা পরিষদের সভার শেষে প্রধান উপদেষ্টা কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে ৪ ঘণ্টা রূদ্ধদার বৈঠক করেন। সেই সময়েই তিনি পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে মহম্মদ ইউনূস আক্ষেপ করেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি ও ছাত্রনেতাদের একাংশ সরকারকে সমর্থন করছে না। এভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। নির্বাচন নিয়ে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। অনিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হলে, তার দায় নিতে চান না তিনি। পাশাপাশি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও রাখাইন করিডর নিয়ে তাঁর মতবিরোধ প্রকাশ্যে আসে।
নানা জল্পনার মাঝেই শনিবার দুপুরে শেরেবাংলা নগরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ছিল। তারপরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেখানেই তিনি পদত্যাগের সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দেন। বলেন, 'উনি তো চলে যাবেন- বলেননি। উনি বলেছেন যে, ‘আমরা যে কাজ ক রছি, আমাদের উপরে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে; কিন্তু আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব, এটা তো বড় দায়িত্ব, এটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ, বহুবছরের ভবিষ্যৎ, এ দায়িত্ব ছেড়ে তো আমরা যেতে পারব না।' এবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠক ডাকলেন ইউনূস।