সজীব ওয়াজেদ জয় ও মহম্মদ ইউনূসবাংলাদেশের কট্টরপন্থীদের রমরমা যে ভারতের জন্য ক্রমেই 'থ্রেট' হয়ে উঠছে, সে বিষয়ে রীতিমতো সতর্ক করলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি স্পষ্ট জানালেন, বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে কট্টরপন্থী মুসলিমদের শাসন আনার চেষ্টা করছে, যা ভারতের জন্য বিপজ্জনক।
বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মুসলিমদের উত্থান
'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে সজীব বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মুসলিমদের উত্থান, রাজনৈতিক নির্বাসন ও মুজিবুর রহমানের পরিবারের ঐতিহ্য, সব নিয়েই বিস্তারিত মত জানালেন। ভারতের জন্য হাসিনা পুত্রের পরামর্শ, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক কমিউনিটিগুলিতে ভারতের আরও অ্যাক্টিভ ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। তাঁর কথায়, 'বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লিগ ও তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে যে নির্বাচন হতে চলেছে বাংলাদেশে, তা আদতে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সামিল। এটি আসলে একটি অবৈধ নির্বাচন।'
শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে কী বলছেন সজীব?
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে বারবার ভারতকে আবেদন করছে বাংলাদেশ। সেই প্রসঙ্গে সজীবের মন্তব্য, 'বাংলাদেশে ন্যূনতম বিচারপ্রক্রিয়াও মানা হয়নি। আমার মা নিজের আইনজীবী পর্যন্ত পাঠানোর অনুমতি পাননি। তাই আমার মনে হয় না, এই বিষয়ে ভারতের কিছু করার আছে।' পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকার বন্ধুত্ব যে ভাবে বাড়ছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করলেন তিনি। বলছেন, 'পাকিস্তান-বাংলাদেশে এই যে ঘনিষ্ঠতা, এটা কিন্তু ভারতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। আমাদের আওয়ামী লিগ সরকার বরাবর ভারতের পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত সুরক্ষিত রেখেছিল। কোনও জঙ্গিকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। ভারতে যাতে পাকিস্তানি জঙ্গিরা কোনও রকম হিংসাত্মক কার্যকলাপ না চালাতে পারে, তার জন্য বাংলাদেশের আওয়ামী লিগ সরকার তত্পর থেকেছে এবং নিজেদের জমি ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। এবার সেই সব জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু হবে।'
পাকিস্তানি জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প খোলা হয়েছে বাংলাদেশে
ভারতকে সতর্ক করে সজীবের দাবি, ইউনূস সরকার জামাত ই ইসলামি সহ কট্টরপন্থী মুসলিম দলগুলিকে শক্তিশালী করছে। তাঁর কথায়, 'ইউনূস সরকার জামাত-ই-ইসলামি আর অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলিকে পুরোপুরি ছাড় দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা কখনওই ৫ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি। কিন্তু সব প্রগতিশীল ও উদারপন্থী দলকে নিষিদ্ধ করে সাজানো নির্বাচন করিয়ে ইউনূস সরকার আসলে ইসলামপন্থীদেরই ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প চালু হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আল কায়েদা অ্যাক্টিভ, পাকিস্তানের লস্কর ই তৈবা জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্যে জন সমাবেশ করছে। তা ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক।'
আওয়ামী লিগের ভবিষ্যত্ কী?
আওয়ামী লিগের ভবিষ্যত্ নিয়ে ওয়াজেদের দাবি, বাংলাদেশে আওয়ামী লিগ এখনও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লিগ বরাবর প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষ আওয়ামী লিগকে ভোট দিয়েছেন। আমাদের হাজার হাজার কর্মী, সমর্থক। একটি দেশের অর্ধেক জনমতকে আপনি কখনওই মুছে ফেলতে পারেন না। আওয়ামী লিগ আছে ও থাকবে। আমরা প্রতিবাদের ঝাঁঝ আরও বাড়াব। আওয়ামী লিগ খুব শীঘ্রই ফিরবে।'
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে ‘নীরব দর্শক’ বলে ব্যাখ্যা করছেন ওয়াজেদ। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, মায়ের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। ওয়াজেদ বলেন, 'আমার বার্তা খুবই স্পষ্ট, আমার পরিবারকে নিশানা করে তড়িঘড়ি যে ভুয়ো রায় দেওয়া হয়েছে, তা সামনে আনা এবং ইউনূস সরকারের অধীনে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকারের যে ঘাটতি রয়েছে, সেটাই তুলে ধরা।'
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লিগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ওয়াজেদের মন্তব্য, 'এটা দলের কর্মীরাই ঠিক করবেন। আমরা একটি গণতান্ত্রিক দল, এখানে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় দলের সদস্যদের ভোটে। দলের ভিত্তি আজও পুরোপুরি আমার মায়ের প্রতি অনুগত, তাই সিদ্ধান্তটাও তাঁদেরই।'