জনগণের গতিবিধি দেখে এবার ঢোঁক গিলতে বাধ্য হলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। এবার আওয়ামী লিগ নিয়ে যে মন্তব্য করলেন, তাতে স্পষ্ট, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ভয় বাড়ছে ইউনূসের। এতদিন পর ইউনূসের দাবি, বাংলাদেশে আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ নয়। প্রধান উপদেষ্টার এহেন মন্তব্যে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
হঠাত্ ইউনূসের U টার্ন একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে
সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই সম্ভবত বাংলাদেশে নির্বাচন। গত মে মাসে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লিগের হাজার হাজার কর্মী পলাতক। বাংলাদেশে যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের উপরেও অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছে। এবার হঠাত্ ইউনূসের U টার্ন একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে।
'আওয়ামী লিগ এখনও বাংলাদেশে বৈধ রাজনৈতিক দল'
রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনের ফাঁকে একটি ইভেন্টে আওয়ামী লিগ নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইউনূস বললেন, 'আওয়ামী লিগ এখনও বাংলাদেশে বৈধ রাজনৈতিক দল। ওদের কার্যকলাপ কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে। কিছুদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ নয় বাংলাদেশে।' তাহলে কি আওয়ামী লিগের উপর থেকে সাসপেনশন তুলে নেওয়া হবে? তার উত্তরে ইউনূসের তাত্পর্য জবাব হল, 'এটা তো সম্ভাবনার পর্যায়ে।' বাংলাদেশের নির্বাচনে আওয়ামী লিগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ইউনূস বললেন, 'নির্বাচনের বিষয়টি ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। এটা পুরোটাই কমিশনের বিষয়। তারাই ঠিক করবে, কোন দল লড়বে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, এমন কোনও দলে তারা না-ও রাখতে পারে।'
এরপরেই সাংবাদিক যখন বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের লক্ষ লক্ষ সমর্থকের প্রসঙ্গ তোলেন, ইউনূস বললেন, 'লক্ষ লক্ষ বলতে পারব না। তবে হ্যাঁ, ওদের সমর্থক রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু কতজন এখনও রয়েছেন, জানি না।'
খালেদা জিয়াদের চাপে রাখার খেলা?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা আসলে ইউনূসের একটি স্ট্র্যাটেজি বা গেমপ্ল্যানও হতে পারে। মূলত, খালেদা জিয়ার বিএনপি-কে চাপে রাখার কৌশল। কারণ, শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শত্রু খালেদা জিয়া। আর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারেরও বিরোধী বিএনপি। দ্রুত ভোট চাইছে। আবার হাসিনা না থাকলে, ভোটে পাল্লা ভারী থাকার সম্ভাবনা খালেদার দিকেই। তাই তাদের হারাতে ছক কষছেন ইউনূস।
অন্যদিকে, শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা এবং মহম্মদ ইউনূসকে শীর্ষ পদে বসানো ছাত্রদের তৈরি ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, তারা অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে ইউনুস সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লিগের সব কার্যকলাপ স্থগিত করে দেয়, এমনকী তাদের অনলাইন কর্মসূচিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে।
তবে ইউনূস মন্ত্রিসভার আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্যকে শুধু 'তাত্ত্বিক' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, আওয়ামী লিগের ওপর থেকে এই স্থগিতাদেশ আগামী নির্বাচন বা নিকট ভবিষ্যতে প্রত্যাহার হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
তাহলে কি নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লিগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরতে পারে?
এই প্রশ্নে ইউনূসের বক্তব্য, 'আওয়ামী লিগ দল হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারাধীন। বাংলাদেশে হিংসায় দায়ী। গণহত্যা করেছে। এই সব কিছুর জন্য দুঃখপ্রকাশ বা দায় নেয়নি,উল্টে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে।'