মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত করতে চায় না। বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। মঙ্গলবার এ কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সাহাউদ্দিন আহমেদ। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ, ভিসা পরিষেবা স্থগিত ও আক্রমণাত্মক মন্তব্যে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক যখন নতুন করে অবনতির আশঙ্কায়, তখনই তাঁর এই মন্তব্য। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস নিজে থেকেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কাজ করছেন।
সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের মতো বড় প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনও ধরনের তিক্ত সম্পর্ক চায় না। বরং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উন্নত করা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই সরকারের মূল লক্ষ্য।' তিনি আরও বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে সাম্প্রতিক টানাপোড়েন কমিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কোনও পরিস্থিতিতেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হোক, এটা সরকার চায় না।' ঢাকার বাংলা দৈনিক 'রূপান্তর' এ খবর প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি নানা মহলে শোনা ভারতবিরোধী বক্তব্য প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কোনও মিল নেই। রাজনৈতিক বক্তব্য যা-ই হোক, দুই রাষ্ট্রের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে ইউনূস প্রশাসন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রভাব ফেলবে না। তিনি নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কোনও বাধা থাকবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে, দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার জানায়, ইউনূস প্রশাসন পাকিস্তান থেকেও অতিরিক্ত ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার পরিকল্পনা করছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'তৃতীয় কোনও পক্ষের উস্কানিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হলে অন্তর্বর্তী সরকারে তাতে পা দেবে না। জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়াই লক্ষ্য।'
নতুন করে ভারত–বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে ভারতবিরোধী রব়্যাডিক্যাল নেতা ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের পর। তার ত্যুর পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন শহরে ভারতীয় হাইকিশন লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে, ভারতে ঢাকায় কর্মরত হিন্দু বাংলাদেশি শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খুন করে জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে নয়াদিল্লিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। সোমবার থেকেই বাংলাদেশ হাইকমিশন অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে।