বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। একদিকে জামাত-ই-ইসলামির মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলিকে নির্বাচনে লড়ার অনুমতি দেওয়ার কারণে গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপেই ঘেরা নন, সেনাবাহিনীর সঙ্গেও তাঁর টানাপোড়েন ঝামেলা আরও বাড়িয়ে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে আমেরিকা ও চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কি সত্যিই তাঁকে ক্ষমতায় রাখতে পারবে, নাকি বাংলাদেশ আরও একটি অস্থিরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত মৌলবাদী দলগুলি
প্রকৃতপক্ষে, সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত জামাত-ই-ইসলামিকে বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে পুনরায় প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। এটি সেই একই সংগঠন যাদের দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। অন্যদিকে, নির্বাচন দেরি হওয়া নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। তারা মিটিং মিছিল করছে। নির্বাচনের দাবিতে ক্রমেই সুর চড়াচ্ছে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিক রহমান সম্প্রতি ডিজিটাল মাধ্যমে এক বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেন এবং বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। এখন কোনও অজুহাত কাজ করবে না। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার গণতন্ত্রকে লাইনচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
সেনাবাহিনীও ইউনূসের ওপর বিরক্ত
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানান। তারপরেই বিএনপির দাবি আরও জোরদার হয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সেনাবাহিনীও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে এবং দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে।
'আমেরিকার হাতে পুতুল'
ইউনূস তাঁর চেয়ার বাঁচাতে আমেরিকা ও চিনের আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন। সম্প্রতি হাসিনা ইউনূসকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, 'আমি বা আমার বাবা কেউই বাংলাদেশকে আমেরিকার কাছে বিক্রি করিনি, কিন্তু ইউনূস এখন আমেরিকার হাতে পুতুল হয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চান।'
চিন থেকে বিনিয়োগ চাওয়া রাজনৈতিক চাপে ঘেরা ইউনূস এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক ফ্রন্টে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি তিনি চিনের সঙ্গে একটি বৃহৎ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। যেখানে ১৫০ জনেরও বেশি চিনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। ইউনূস বলেছেন যে বাংলাদেশ এবং চিন একসঙ্গে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারে। এর আগে তিনি মার্চ মাসে চিন সফরে গিয়েছিলেন। এখন দেখার বিষয় হল মৌলবাদীদের প্রত্যাবর্তন, বিরোধী দলের চাপ, সেনাবাহিনীর অসন্তুষ্টি এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির মধ্যে মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর চেয়ার বাঁচাতে পারেন কি না, নাকি বাংলাদেশ আরেকটি রাজনৈতিক সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যায়।