আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে নির্বাচন করতে চাইছে দেশটির অন্তর্বর্তী প্রশাস ৷ ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার তৈরির পর থেকেই নির্বাচনের দিন নিয়ে জল্পনা চলছে ৷ নির্বাচন কবে হতে পারে এই প্রশ্নে সর্বসম্মতিক্রমে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় একসময় প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন মহম্মদ ইউনূস ৷ পরে অবশ্য নিজের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন ৷ জানা যায় ফেব্রুয়ারি মাসে ভোট হতে পারে ৷ তিনি নিজেও এ কথা ঘোষণা করেন ৷ তবে এরপরও জল্পনা থামেনি ৷ আর এর মাঝেই সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইউনূস সরকারের আমলে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোর প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭.৯৩ বা প্রায় ২৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ। অথার্ৎ তিন বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্য কমেনি, উল্টো বেশ বেড়েছে। আজ সোমবার বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিশিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় দারিদ্র্য বৃদ্ধির এই চিত্র ওঠে এসেছে। ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেবেল ইন মিড ২০২৫’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। পিপিআরসির গবেষণা অনুসারে অতি দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫.৬ শতাংশ। ২০২৫ সালে এসে অতি দারিদ্র্য হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৫ শতাংশ। এর মানে হলো, গত তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এখনো ১৮ শতাংশ পরিবার যেকোনও সময় গরিব হয়ে যেতে পারে। গত মে মাসে ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়।
পিপিআরসির গবেষণা বলেছে, বাংলাদেশে এখন তিন ধরনের সংকটের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এগুলো—কোভিড (২০২০-২০২২), মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। পিপিআরসি আরও বলেছে, গত বছরের অগাস্টের পর ঘুষ কমলেও তা বন্ধ হয়নি। গত বছরের অগাস্ট মাসের আগে গবেষণায় মতামত প্রদানকারীদের ৮ .৫৪ শতাংশ সেবা নিতে ঘুষ দিয়েছেন। অগাস্ট মাসের পর এই হার ৩. ৬৯ শতাংশে নেমেছে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দেওয়া হয়েছে সরকারি অফিসে। এর পরে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের বেশি ঘুষ দিয়েছে মানুষ।
এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে, তিন বছরের ব্যবধানে শহরের পরিবারের মাসিক আয় কমেছে, কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে। শহরের একটি পরিবারের গড়ে মাসিক আয় বাংলাদেশি টাকায় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা। খরচ হয় ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। ২০২২ সালে শহরের একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ৪৫ হাজার ৫৭৮ টাকা। অন্যদিকে গ্রামের পরিবারের গড় আয় কিছুটা বেড়েছে। গ্রামের একটি পরিবারের গড় আয় ২৯ হাজার ২০৫ টাকা, খরচ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। ২০২২ সালে গ্রামের পরিবারের গড় আয় ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ টাকা। সার্বিকভাবে বাংলাদেশে একটি পরিবারের মাসে গড় আয় ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা। খরচ হয় ৩২ হাজার ৬১৫ টাকা। সঞ্চয় নেই বললেই চলে। পাশাপাশি, একটি পরিবার কোন খাতে কত খরচ করে, তারও একটি চিত্র দিয়েছে পিপিআরসি। সেখানে দেখা গেছে, একটি পরিবারের মাসের মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবার কেনায়। একটি পরিবার খাবার কিনতে মাসে গড়ে ১০ হাজার ৬১৪ টাকা খরচ করে। এ ছাড়া প্রতি মাসে শিক্ষায় ১ হাজার ৮২২ টাকা, চিকিৎসায় ১ হাজার ৫৫৬ টাকা, যাতায়াতে ১ হাজার ৪৭৮ টাকা ও আবাসনে ১ হাজার ৮৯ টাকা খরচ হয়।