চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। গত সোমবার বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হয়। তারপর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তিনি। তাঁর গ্রেফতারির পর বাংলাদেশের কোনও কোনও জায়গায় অশান্তি ছড়িয়েছে। হিন্দুরা পথে নেমেছেন। সন্ন্যাসীর গ্রেফতারির প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিশ্বের অনেক মানুষ।
এদিকে চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। নড়েচড়ে বসেছে মহম্মদ ইউনুসের প্রশাসনও।
কে এই চিন্ময় দাস? চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আসল নাম চন্দন কুমার ধর। তিনি এর আগে ইসকনের (ISCKON)-এর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন। হিন্দুদের একাধিক আন্দোলনের মুখ হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের সক্রিয় সদস্য। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ত্যাগের পর সেখানে হিন্দুদের উপর আক্রমণ নেমে আসে বলে অভিযোগ। তাতে হিন্দুরাও পথে নামেন। সেই রকম একাধিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করে আসছেন।
বাংলাদেশে ক্রমাগত কমছে হিন্দুদের সংখ্যা
বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে হিন্দুদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭.৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। অর্থাৎ হিন্দু বসবাস করেন ১.৩৫ কোটি। কিন্তু এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে হিন্দুদের জনসংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি। প্রায় ৪ জেলায় হিন্দুদের জনসংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশের বেশি। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। সেখানে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে। অভিযোগ, প্রতিবারই বাংলাদেশে কমবেশি সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়। তার জেরে হিন্দুদের ঘরছাড়া হতে হয়। অনেকের সম্পত্তিও লুট হয়। সেদেশে হিন্দুদের অবস্থা উদ্বেগজনক। সেই হিন্দুদের হয়েই লড়ছিলেন এই চিন্ময় দাস।
চিন্ময় দাসকে কি ভয় পাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার?
বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনগুলোর অভিযোগ, চিন্ময় দাস সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সরব হয়েছেন একাধিকাবার। তিনি বার্তাও দিয়েছেন। সেজন্য মহম্মদ ইউনুসের সরকার ওই সন্ন্যাসীকে ভয় পাচ্ছে।
চিন্ময় দাস বিভিন্ন সময় কী কী দাবি করেছিলেন?
১) সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত শুনানি করতে হবে। সেই সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩) সংখ্যালঘুদের জন্য একটি মন্ত্রণালয় তৈরি করা উচিত, যাতে সংখ্যালঘুরা তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে।
৪) বন্দী দেবোত্তর (মন্দির) সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের মন্দির ও উপাসনালয় রক্ষায় আইন করতে হবে।
৫) সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং হস্টেলে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় তৈরি করা উচিত, যাতে তারাও পুজা করতে পারে।
৬) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে পালি ও সংস্কৃত বোর্ডের আধুনিকীকরণ করতে হবে।
৭) দুর্গাপূজার জন্য পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা উচিত।
চিন্ময় দাসকে কেন গ্রেফতার করা হয়?
গত সোমবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার সময় চিন্ময় দাসকে আটক করা হয়। সাদা পোশাকের কয়েকজন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানান, চিন্ময় দাসকে কোনও কারণ না দেখিয়ে জোর করে ভ্যানে তুলে দেওয়া হয়। চিন্ময় দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
গত অক্টোবরে একটি বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশের পতাকার অবমাননার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দাবি করা হয়, এই প্রতিবাদে বাংলাদেশের পতাকার চেয়ে বেশি উঁচুতে জাফরান পতাকা উত্তোলন করা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাধারমণ দাস। চিন্ময় দাস গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। এখন বিক্ষোভ দমন করা হচ্ছে।