বাংলাদেশে চলছে দুর্গাপুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে ব্যস্ত সারা দেশের ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দির৷ অন্য বছরের তুলনায় এ বারে দুর্গাপুজো বেড়েছে বলে দাবি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের। ঢাকায় বেড়েছে সাতটি মণ্ডপ। সরকারের হিসেবের সঙ্গে যদিও এই দাবি মিলছে না।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বার বাংলাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপুজো হবে। গত বছর হয়েছিল ৩১ হাজার ৪৬১টি পুজো। সেই হিসেবে এ বার ১৮৯৪টি পুজো বেশি হচ্ছে। তবে সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলছে না পূজা উদ্যাপন পরিষদের এই পরিসংখ্যান। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, এ বছর দুর্গাপুজো হচ্ছে মোট ৩১,৫২৬টি মণ্ডপ ও মন্দিরে।
শিল্পীরা জানিয়েছেন, আজ ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রতিমা মণ্ডপে তুলতে হবে, কারণ ২৮ তারিখ মহাষষ্ঠী। এদিকে বাংলাদেশে দুর্গাপুজো নিয়ে কোনও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলেই সদ্য আশ্বস্ত করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম। কিন্তু একেবারে ভিন্ন সুর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির। তারা জানিয়েছে, নির্বিঘ্নে দুর্গাপুজো করা নিয়ে বেড়েই চলেছে আশঙ্কা ও উদ্বেগ।
শুক্রবার কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৯টি পুজোমণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। যদিও উপদেষ্টা ইউনূস থেকে সেদেশের সেনাপ্রধান কিংবা প্রশাসনের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আশ্বস্ত করছেন। তবে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় এরপরও উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। পুজোর দিনগুলোয় আরও বেশি হিংসাত্মক ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সামগ্রিক ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সঠিক পদক্ষেপের আবেদন জানানো হচ্ছে কমিটির তরফে।
ধর্মীয় বৈষম্যবিরোধী মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, পুজোর প্রাক্কালে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁরা কোনভাবেই আশান্বিত হতে পারছেন না। বরং আশঙ্কা ও উদ্বেগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাঁরা বলছেন, গত ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত সারা দেশে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী কমপক্ষে মোট ৯টি পুজোমণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সহ কিছু জেলায় পুজোকেন্দ্রিক সংঘটিত গোলযোগের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ঘটনায় জনমনে ভয়ভীতি ও শঙ্কা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে এবং সামনের পুজো চলাকালীন দিনগুলোতে অধিকতর সহিংস ঘটনার আশঙ্কা করছে। ঐক্য পরিষদ পুজোর প্রাক্কালে বিদ্যমান পরিস্থিতি সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উৎসব চলাকালীন সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে, দেশের হিন্দু সম্প্রদায় যাতে আসন্ন শারদীয়া দুর্গাপুজো নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পারে, সেজন্য অতীতের মতো এবারও তাদের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছে বিএনপি। অপরদিকে, দুর্গামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরার আহ্বান জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছেন।