শেখ হাসিনা'আওয়ামী লিগ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন কখনও বৈধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।' এমনটাই মনে করছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পরই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে এসেছিলেন তিনি। আপাতত তাঁর আস্থাতা নয়াদিল্লি। সুরক্ষার কারণে সেই স্থানের ঠিকানা প্রকাশ করা হয় না। সেই গোপন স্থান থেকেই ইন্ডিয়া টুডে গ্লোবালকে একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বাংলাদেশের কঠিন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বর্তমান সংকট নিয়ে অকপট আলোচনা করেছেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের ৪ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। নির্বাসিত জীবনের মূল্য, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন মুজিব কন্যা।
প্রশ্ন: আপনার দল এখন নিষিদ্ধ, আওয়ামী লিগ ছাড়া কি নির্বাচন বৈধ?
হাসিনা: আওয়ামী লিগকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচনই বৈধ হতে পারে না। এই নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে অসাংবিধানিক চার্টারের অধীনে। যা একটি অনির্বাচিত সরকার প্রণয়ন করেছে। যে দলটি ৯ বার নির্বাচিত হয়েছে এবং সর্বশেষ নির্বাচনেও জনগণের সমর্থনে ক্ষমতায় ছিল, তাকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দিচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ ভোটার ভোটাধিকার হারিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকুক বা বিরোধী দলে, আওয়ামী লিগকে এভাবে সরিয়ে রাখা যায় না। দেশের স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন:আপনি কি একদিন দেশে ফিরতে চান? কীভাবে সম্ভব?
হাসিনা: সারাজীবন আমি দেশের উন্নতির জন্য কাজ করেছি। আজও সেই প্রতিশ্রুতি রাখি। দেশে ফেরার আগে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। অর্থাৎ অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যেখানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বহাল করা হবে। ব্যক্তিগত ক্ষমতা আমার লক্ষ্য নয়। এটি বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধি বাছাইয়ের মৌলিক অধিকার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বহুত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং সব নাগরিকের অধিকার রক্ষার বিষয়।
প্রশ্ন: আপনি কি কিছু বিষয় ভিন্নভাবে করতে চাইতেন?
হাসিনা: সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থা নিয়ে কিছু মানুষের ক্ষোভ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত। এটা আমি স্বীকার করি। হয়তো আরও দ্রুত কাজ করা যেত। পরিস্থিতি অবনতি না হলে আমরা প্রথম মৃত্যুর ঘটনার পরই যে স্বতন্ত্র তদন্ত শুরু করেছিলাম তা সম্পন্ন হত। ইউনূস ক্ষমতা দখল করার পর সেই তদন্ত বন্ধ হয়ে যায়। যারা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের কাছে সত্য তুলে ধরতে না পারা আমার দুঃখ।
প্রশ্ন: বাড়ছে চরমপন্থা, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে কি আপনি উদ্বিগ্ন?
হাসিনা: হ্যাঁ, আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা যে দৃশ্য দেখছি, বিনা কারণে আটক, রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, গণমাধ্যম দমন, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ, আমাদের রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে ধ্বংস করছে। বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত উগ্র গোষ্ঠীগুলো সাংবিধানিক ব্যবস্থা দুর্বল করছে। সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশ করায় টার্গেট হচ্ছেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ভেঙে পড়ছে। এটা সেই বাংলাদেশ নয়, যার জন্য আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছি।
প্রশ্ন: ইউনূসের শাসনের পিছনে কারা? তিনি কি আপসকামী?
হাসিনা: ইউনূস এবং তাঁর দল ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে বেশি আগ্রহী। জনগণের সেবা নয়। গণতন্ত্র ভেঙে চরমপন্থীদের সুযোগ করে দেওয়াই তার শাসনের মূল বৈশিষ্ট্য। তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করতে, সংবিধানকে বিকৃত করতে এবং ভিন্নমতকে চুপ করিয়ে দিতে দ্বিধা করেন না।
প্রশ্ন: পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন আবার বাংলাদেশে সক্রিয় হচ্ছে। কতটা উদ্বেগজনক? ভারত কী করতে পারে?
হাসিনা: এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বর্তমান প্রশাসন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আপস করে এমন পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে জঙ্গিরা আবার আশ্রয় পাচ্ছে। ভারতের উচিত বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো অবস্থান বজায় রাখা। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই বাংলাদেশকে স্থিতিশীলতার পথে ফিরিয়ে আনবে এবং দুই দেশের পুরনো বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।