বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ফের গণপিটুনির ঘটনা। বুধবার তিন ঘণ্টার মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকায় দু’জন যুবককে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয়রা। নিহতদের বয়স ২০ বছরের নীচে বলে জানা গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের সন্দেহ উঠেছিল। ঠিক দুই দিন আগে একই এলাকায় একই অভিযোগে আরেক যুবক গণপিটুনিতে প্রাণ হারান। ফলে পরপর একাধিক ঘটনায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে প্রশাসন ও মানবাধিকার মহলে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির উদ্বেগ
বাংলাদেশের শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (এএসকে) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ১২৪ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। কেবল অগাস্টের প্রথম ১০ দিনেই ৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার সংবাদমাধ্যম 'প্রথম আলো'। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুজবের জেরেই গণপিটুনি বলে জানা গেছে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বীকার করেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, 'দেশে গণপিটুনির ধারাবাহিক ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের আগে এ ধরনের হিংসায় লাগাম টানা জরুরি।' সম্পাদকীয়তে গণপিটুনিকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনের জন্য অশনি সংকেত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্মীয় হিংসা
এই সপ্তাহের শুরুতে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা সুফি দরবেশ নুরা পাগলার কবর ভেঙে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়। নিজেদের মুসলিম 'একেশ্বরবাদী জনতা' দাবি করা ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে দরবেশের অনুসারীদের সংঘর্ষে পুলিশ ও প্রশাসনের গাড়ি ভাঙচুর হয়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে একজন নিহত হন, আহত হন শতাধিক মানুষ।
জনমত সমীক্ষার ফলাফল
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং ভয়েস ফর রিফর্মের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি ক্রমবর্ধমান গণপিটুনি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।