আবারও সেই জুলাই মাস। ফের জ্বলছে বাংলাদেশ। এবার অকুস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার জন্মভিটে গোপালগঞ্জ। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা ও আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের গণঅভ্যত্থানের ডাক ঘিরে তীব্র অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয় গোপালগঞ্জে। তাঁর উস্কানিমূলক ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোপালগঞ্জ। সংঘর্ষ বেধে যায় NCP ও আওয়ামী লিগের মধ্যে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ফের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে নিহতের সংখ্যা ৫ ছাড়িয়েছে বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।
বাড়ল মৃত্যু
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো সূত্রে খবর, হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন ৩২ বছর বয়সী রমজানম মুন্সী। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে প্রাণ হারান তিনি। আরও ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ বলে খবর।
মুজিবের সমাধিতে হামলার টার্গেট?
প্রথম আলো-র প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শী এবং পুলিশকর্মীরা জানিয়েছেন, গ্রাম থেকে লোক নিয়ে এসে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রচার চালানো হয়েছিল, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে হামলা চালানো হবে। গোপালগঞ্জ জেলার নাম বদলে দেওয়া হবে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তার পরে আরও উত্তেজক হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বাংলাদেশের সদ্যপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল NCP-র সঙ্গে আওয়ামী লিগের কর্মী-সমর্থকেরা বচসা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে।
মুজিবের জেলা গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ বরাবরই শক্তিশালী। হাসিনা সরকারের পতনের পর দলের নেতা-কর্মীরা যখন দেশের নানা প্রান্ত ছেড়েছেন, সেই সময়েও গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর উপর হামলা হয়েছিল। ফলে পুলিশের একাংশ মনে করছে, গোপালগঞ্জ নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
ঘটনাটি ঠিক কী?
NCP গোপালগঞ্জে জুলাই পদযাত্রার আয়োজন করেছিল। তাকে কেন্দ্র করে এই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোপালগঞ্জ। হামলা, ভাঙচুর থেকে শুরু করে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে। গুলিও চলে বেশ কয়েক রাউন্ড। গোপালগঞ্জের ঘটনায় ইতিমধ্যে ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের পুলিশ। হামলাকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদেরও অনেকে আহত হয়েছেন। এদিকে, NCP-র অভিযোগ, হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্যেরা এই অশান্তি করেছেন। তাঁদের পদযাত্রায় হামলা চালানো হয়েছে। একটি অডিয়ো-বার্তায় হাসিনা পাল্টা বলেন, ‘গোপালগঞ্জে NCP গন্ডোগোল করেছে। ১৫ জনের গুলি লেগেছে। ৭ জন নিহত। কেউ কেউ বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।'
অশনি সংকেত
এমন একটি সময়ে এই ঘটনা ঘটল যখন সংস্কার, জুলাই সনদ ও নির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ কাটেনি। এমন প্রেক্ষাপটে গোপালগঞ্জের হিংসাত্মক পরিস্থিতি দেশের রাজনীতিতে 'অশনি সংকেত' বলেই মনে করেন অনেক রাজনৈতিক নেতা। BNP নেতারা বলছেন, 'ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পরিকল্পিত ভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হচ্ছে। ফ্যাসিবাদি শক্তি ঠিক গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মাথায় যে দুঃসাহস দেখিয়েছে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। সরকারের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।'