চলতি বছরের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে দুই দেশের মধ্য়ে উত্তেজনা বাড়ছে। সেদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের টার্গেট করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ প্রশাসন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস-সহ কয়েকজন সন্ন্যাসীকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। এই গ্রেফতারির প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ হয়। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে রাষ্ট্রসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর দাবি জানান।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ান-
মমতা বলেন, যখনই বাংলাদেশ থেকে কোনও নৌকা ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছায়, আমরা তাদের সঙ্গে নম্র আচরণ করি। অন্য অনেক ক্ষেত্রে ছাড়ও দেওয়া হয়। তবে সেখানে সরকার পরিবর্তনের কারণে সংখ্যালঘুদের উপর হিংসা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিজেরই বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘ কাছে তুলে ধরে সেদেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর কথা বলা উচিত। তবে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেও তা পাঠানোর নির্দিষ্ট প্রোটোকল রয়েছে।
শান্তিরক্ষা বাহিনী কী-কীভাবে তা কাজ করে?
যখনই সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা দেখা দেয় তখন রাষ্ট্রসংঘ সেখানে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে পারে। এই সেনাবাহিনীর ভিত্তি স্থাপিত হয় ১৯৪৮ সালে। যার উদ্দেশ্য ছিল ইজরায়েল এবং আরব দেশগুলির মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা। যদিও পরবর্তী সময়ে এর পরিধি বাড়তে থাকে। বর্তমানে, ভারত-সহ ১২০ টিরও বেশি দেশের জওয়ান এতে মোতায়েন রয়েছে।
শান্তিরক্ষা বাহিনী কি যুদ্ধ লড়ে?
না, শান্তিরক্ষা বাহিনী কখনও যুদ্ধে অংশ নেয় না। তাদের কাজ হচ্ছে নিরপেক্ষ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা। তবে সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ছয়ের দশকে রাষ্ট্রসংঘ কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়েছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি কতটা সঠিক?
শান্তিরক্ষা বাহিনী কখনও নিজে থেকে কোনও দেশে যেতে পারে না। যে দেশে তারা যাবে সেই দেশের অনুমতি নিতে হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনী কোনও দেশে তখনই যেতে পারে যখন সেই দেশ চায়। কোনও দেশ বাহিনী চাইলে তখন রাষ্ট্রসংঘের সঙ্গে সেই দেশের চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতেই ঠিক হয়ে যায় কতটা স্বাধীনতা থাকবে বাহিনীর বা তাদের কোন কোন কাজ করতে হবে। যে দেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো হয়েছে সেই দেশ যদি মনে করে অযাচিতভাবে কোনও কাজে সেনা হস্তক্ষেপ করছে তাহলে তারা বাহিনী প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যদি চায় তবেই শান্তিরক্ষা বাহিনী সেই দেশে মোতায়েন করা যেতে পারে।
তাহলে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো অসম্ভব?
এখন ভারত যদি শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাতে চায় তাহলে বাংলাদেশের অনুমতি নিচে হবে। দুই দেশের সম্মতি পেলে তবেই শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো সম্ভব।