
শেখ হাসিনাবাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়দান সোমবার। ঘোষণা হবে তাঁদের সাজা। কিন্তু ঠিক কী কী অভিযোগ রয়েছে মুজিবকন্যার বিরুদ্ধে?
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে এই প্রথম রায় ঘোষণা হতে চলেছে। এই মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মানবতাবিরোধী নির্দিষ্ট ৫টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
১) উস্কানিমূলক মন্তব্য
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই বাংলাদেশের গণভবনে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ হাসিনা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র ও জনতার উপর ব্যাপক মাত্রায় হামলায় চালায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং নির্যাতন চলে বলেও অভিযোগ। একইসঙ্গে এই সমস্ত ঘটনায় অভিযুক্তদের কোনওরকম শাস্তি প্রদান করা হয়নি বলেও জানানো হয়।

২) প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের দমন করতে ড্রোন থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই নির্দেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁদের অধীনে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, এমনটাও অভিযোগ। এর মাধ্যমে আসামিরা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।
৩) রংপুরে ছাত্র হত্যা
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাইদ নামে এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে অভিযুক্ত হিসেবে দায়ী করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে তাঁদের নির্দেশ, উস্কানি, সহায়তা এবং ষড়যন্ত্রেই হয়েছে বলেও অভিযোগ।
৪) রাজধানীর চাঁনখারপুলে হত্যা
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ঢাকার চাঁনখারপুল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ৬ জন ছাত্র নিহত হন। এই ঘটনাতেও শেখ হাসিনা সহ ৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
৫) হত্যা ও লাশ পোড়ানো
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আশুলিয়ায় ৬ জনকে গুলি করে হত্যা এবং তাঁদের মধ্যে ৫ জনের লাশ পুলিশ দেওয়া এবং একইসঙ্গে গুরুতর আহত ১ জনকে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে হাসিনা সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে। আসামিরাই হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উস্কানি দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

হাসিনাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগে বলা হয়েছ, আসামিদের নির্দেশে এই অপরাধগুলি সংঘটিত হয়েছে। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর মহম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমরা এই মামলার অভিযোগ প্রমাণের যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আদালতে দাখিল করেছি। এইসব তথ্যপ্রমাণ হিমালয়ের তো দৃঢ়, ক্রিস্টালের তো স্বচ্ছ। পৃথিবীর যে কোনও আদালতে এই তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে অপরাধীদের অপরাধ সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হবে।'
অপরদিকে, শেখ হাসিনা সহ ৩ জনের পক্ষে আইনজীবী মহম্মদ আমির হোসেন বলেন, '২০২৪ সালের ১৪ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে শেখ হাসিনা কোনও হত্যার নির্দেশ দেননি। এর কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। প্রসিকিউশন কোনও প্রমাণই দাখিল করতে পারেনি। দেশে রাজাকারদের বিচার হয়েছে। তবু কখনও হাসিনা সরাসরি হত্যার নির্দেশ দেননি। ফলত এই অভিযোগগুলি মিথ্যা।' আইনজীবী আরও জানান, রংপুরে আবু সাইদের মৃত্যুর পর হাসিনা তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, আর্থিক সহায়তা দেন। বরং একটি হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করে দেশে পুলিশ হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে তবুও তার কোনও বিচার হয়নি।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন এদিন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।