Bangladesh General Elections 2024: ভোটের মুখে ইউনুস গ্রেফতার, আমেরিকা তো বিরোধিতা করল না?

তবে এবার বাংলাদেশের নির্বাচনে কি হবে তা নিয়ে গোটা দুনিয়া উদ্বিগ্ন। নানা কারণে শুধু ভারতই নয়, চিন-আমেরিকা-রাশিয়া এমনকি ইউরোপের দেশগুলিও তাকিয়ে আছে। কারণ কী?

Advertisement
ভোটের মুখে ইউনুস গ্রেফতার, আমেরিকা তো বিরোধিতা করল না?Bangladesh General Elections 2024

বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। জাতীয় ভোটার দিবসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট  ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৯ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। তারমানে ভোটার সংখ্যা তার ৭০ শতাংশ।

তবে এবার বাংলাদেশের নির্বাচনে কি হবে তা নিয়ে গোটা দুনিয়া উদ্বিগ্ন। নানা কারণে শুধু ভারতই নয়, চিন-আমেরিকা-রাশিয়া এমনকি ইউরোপের দেশগুলিও তাকিয়ে আছে। কারণ কী?

আসলে কারণ আছে অনেকগুলি। গতবারের মতো এবারও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বাংলাদেশের ভোট বয়কট করছে। বিএনপির সহযোগী শরিক জামাত। এই যৌথ শক্তি ভোট বয়কট করলেও মানুষ নিশ্চিন্ত নয়। কারণ ভোটে যোগ না দিলেও বিএনপি ও জামাত চেষ্টা করছে ভোটের দুদিন আগে থাকতেই গোটা দেশে এক ব্যাপক প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার আক্রমণাত্মক রাজনীতি শুরু করা। যাকে বলে হিংসার রাজনীতি। হিংসা-সন্ত্রাস বাংলাদেশের নির্বাচনী গণতন্ত্রের আবহে নষ্ট করে দেওয়া। আর সেটা সম্ভব হলে বিরোধীরা অভিযোগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না। গণতন্ত্রের আবহ বিনষ্ট হয়ে গেছে। অতএব এই ভোট বাতিল করে দেওয়া হোক। তার বদলে তৈরি হোক এক তত্ত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার সরকার। সেই সরকারের নেতৃত্বে অর্থাৎ কেয়ারটেকার সরকারকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে ছ’মাস পর ভোট করা।

সেটা কোনও ভাবে বিএনপি যদি করতে পারে তবে তখন বিএনপিও সেই নির্বাচনে যোগ দিতে পারে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি গৃহবন্দী। তাঁর পুত্র এখন বিদেশে। নানা অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। তাই পুত্রও কোনও ভাবেই ঢাকায় আসতে পারছে না। তবুও দ্বিতীয় সারির বহু বিএনপি নেতা সক্রিয়। এই নেতারা আশা করছেন,আমেরিকার প্রশাসনের একটা অংশ তাদের সমর্থন করবে। মার্কিন প্রশাসনের এই অংশ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। তাঁরা মনে করছেন হাসিনা মানবাধিকারকে লঙ্ঘন করেছে, দুর্নীতি ও গণতন্ত্রহীনতা চরমে পৌঁছেছে। এই হাসিনা বিরোধী শক্তি প্রথম থেকেই চাইছিল নোবেলবিজয়ী মহম্মদ ইনুসকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান করতে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিএনপি এবং বিরোধীদের এই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। সফল কেন হয়নি, তার জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার। আর শেখ হাসিনার পিছনে সবচেয়ে বড় শক্তিশালী সমর্থন ছিল ভারতের। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের সরকার ও শেখ হাসিনাকে অচলাবস্থায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। 

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী,  জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর প্রশাসনকে বুঝিয়েছেন যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আগুন লাগলে তার আঁচ এসে ভারতে লাগবে। বাংলাদেশ হোয়াইট হাউসের কাছে অগ্রাধিকার নাও হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে জামাতের মত ইসলামিক মৌলবাদী দলের যদি শক্তি বৃদ্ধি হয় তবে তাতে লাভ হবে চিন ও পাকিস্তানের। বাংলাদেশে চিন অনেকদিন থেকেই ঢুকতে চাইছে। বাংলাদেশে বিএনপি জামাতরা নির্দ্ধাবক শক্তি হলে চিন অনেক সহজে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করবে অনেক বেশি। তাতে ভারতের সার্বভৌম সার্থ শুধু নয় আমেরিকারও স্বার্থে পক্ষে নয়।

মহম্মদ ইউনুস
মহম্মদ ইউনুস

আমেরিকা যখন ভোটের আগে ঘনঘন ঢাকায় গিয়ে নাক গলানো শুরু করে তখন হাসিনা নিজে ছোট একটা দেশের নেত্রী হয়েও সার্বভৌম স্বার্থ নিয়ে আপস করেননি। তিনি ঢাকার সংসদে দাঁড়িয়ে আমেরিকার সরাসরি সমালোচনা করেছেন। আবার তারপর জি-২০ সম্মেলনে দিল্লি এসে শেখ হাসিনা বাইডেন হাসিনার সঙ্গে সেলফি তুলতে পর্যন্ত রাজি হন। সেই সেলফিতে হাসিনার কন্যাও উপস্থিত ছিলেন। 

শেখ হাসিনা  বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। তিনি জানেন আমেরিকা ছাড়াও বাংলাদেশের গতি নেই। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয় তাহলে ঢাকা মস্ত বড় বিপদে পড়বে। কারণ ঢাকার রফতানি আমেরিকা ও ইউরোপে ভারতের চেয়েও অনেক বেশি। আবার অন্যদিক থেকে দেখলে অবসর প্রাপ্ত বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিনটন,মহম্মদ ইউনুসকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে হাসিনা সরকারের প্রকাশ্য বিরোধিতা করলেও শেষ পর্যন্ত ভিসা নীতি নিয়ে একেবার শুধু হুমকি দেওয়া ছাড়া আমেরিকাও কিন্তু ঢাকার নির্বাচন পরিচালনায় কোনও বাদ সাধেনি।

এমনকী হাসিনা ভোটের মুখে মহম্মদ ইউনুসকে গ্রেফতার করলেন। আমেরিকা তো এব্যাপারে কোনও বিরোধিতা করল না? হাসিনা প্রশাসনের অভিযোগ মহম্মদ ইউনুস তার সঞ্চয়ের স্বেচ্ছসেবী স্বায়ত্ত্বশাসনের মডেলের মাধ্যমে দেশে এক সমান্তরাল অর্থনীতি তৈরি করেছেন। এই মাইক্রো সংস্থায় বিদেশি বিনিয়োগও ঢুকেছে যা দেশের অর্থনীতিতে গোলমাল সৃষ্টি করেছে। ইউনুস গ্রেফতার হওয়ার ফলে ঢাকায় সাধারণ মানুষদের মধ্যে ভোট নিয়ে আস্থা বেড়েছে। তার মানে শেখ হাসিনা দুর্বল নন। আর ভারত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে।

এই প্রেক্ষাপটে তাই ৭ জানুয়ারি ভোট হয়ে উঠেছে বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ।

Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি প্রতিবেদকের নিজস্ব মত। bangla.aajtak.in এর দায় নিচ্ছে না।

POST A COMMENT
Advertisement