বাংলাদেশে ফের ক্যাম্পাসে ছাত্র বিক্ষোভআবার অশান্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশে। রক্তক্ষয়ী হিংসা ও ষড়যন্ত্রের পরে হাসিনা সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশে অপার শান্তি বিরাজ করবে বলে যাঁরা ধারণা করেছিলেন, তাঁদের একেবারে ভুল প্রমাণ করে মহম্মদ ইউনূসের ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আসলে হাসিনা সরকার ফেলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করাই ছিল লক্ষ্য। যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সেই সময় তথাকথিত আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরাও এখন ক্ষমতার লোভে মত্ত। এবার বাংলাদেশের নীতিগত পরিবর্তন একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে।
কেন ফের ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশে?
বাংলাদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ছাত্র ও শিক্ষকরাও পথে নামলেন। এবার অবশ্য, তাঁরা সরাসরি সরকার বদলের দাবি করছেন না। বরং সংস্কৃতি বাঁচানোর আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিই এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সখ্য দেশটির নীতি ও সংস্কৃতি, দুই ক্ষেত্রেই কুপ্রভাব ফেলছে। একেবারে কট্টর ইসলামী আইন লাগু করে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতিকে শেষ করার চক্রান্তের বিরুদ্ধেই এই আন্দোলন।
মহম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার পরে প্রাইমারি স্কুলে শারীর শিক্ষার (PT) শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রশাসনের বক্তব্য, কিছু প্রশাসনিক সমস্যা ও বাজেটগত ইস্যুর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, আসল কারণ অন্য। কট্টরপন্থী ইসলামি সংগঠনগুলির চাপে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে ইউনূসের প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছড়িয়ে পড়ছে আন্দোলন
আসলে কট্টরপন্থী মুসলিমরা এই ধরনের শিক্ষাকে 'ইসলাম বিরোধী' হিসেবে মানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (যেখান থেকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল), সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশো ছাত্র-ছাত্রী 'অপরাজেয় বাংলা' স্ট্যাচুর নীচে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গান গাইছেন। যার নির্যাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার যে প্ল্যান করছে বাংলাদেশের ইউনূস সরকার ও ইসলামিক সংগঠনগুলি, তা ওতো সহজ নয়। যতই পাকিস্তানের সঙ্গে দোস্তি করুক, পাকিস্তানের সেই অত্যাচার, গণহত্যা বাংলাদেশবাসীকে ভোলানো সহজ হবে না।
গানের শিক্ষক, শিক্ষিকা নিয়োগ বন্ধ
এছাড়া কট্টরপন্থীদের চাপে সঙ্গীতেও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর চেষ্টা চলছে বাংলাদেশে। ইতিমধ্যেই স্কুলে গানের শিক্ষক, শিক্ষিকা নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় সঙ্গীতে বাংলাদেশের অবদান প্রশ্নাতীত। সেই দেশের সাংস্কৃতির ভাবাবেগে আঘাত হেনেছে ইউনূস সরকার। ফলে বাংলাদেশবাসীও ক্ষুব্ধ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, রাজশাহী, সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গানে গানেই চলছে বিরোধ প্রদর্শন। গোটা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে।
তাঁদের দাবি, স্কুলগুলিতে অবিলম্বে সঙ্গীত ও শারীর শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগ চালু হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটর বিভাগের অধ্যাপক ইসরাফিল শাহিন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'শিক্ষা যদি সংস্কৃতিবিহীন হয়, তবে সেটা কেবল একটা খোলস, ভেতরে কিছুই থাকে না।’ সঙ্গীত শিক্ষক আজিজুর রহমান তুহিনও বলেন, 'কলা ছাড়া সভ্যতার অস্তিত্বই নেই। শিল্প-সংস্কৃতি মানেই মানবতার ভিত্তি।'
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে এই ধরনের সাংস্কৃতিক বিতর্কের আশঙ্কা ছিল, এবং এখন তা বাস্তব হয়ে উঠেছে। এক সময় যে দেশকে বলা হতো ধর্মনিরপেক্ষ ও সংস্কৃতিমনস্ক, আজ সেই দেশেই আবার ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলি শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিক হাসান বলেছেন, 'বাংলাদেশ এক সময় সংস্কৃতির আন্দোলন থেকেই জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেই ঐতিহ্যই বিশ্বাসের নামে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে।'