Bangladesh Election 2026: বাংলাদেশে হঠাত্‍ কট্টরপন্থী জামাত ই ইসলামি ক্ষমতায় চলে আসতে পারে? সার্ভে যা বলছে...

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও জামাতের জোট ছিল। তখন খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। এখন দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। যে জামাত একদা বিএনপি-র জোটসঙ্গী ছিল, তারাই এখন প্রধান প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার দলের।

Advertisement
বাংলাদেশে হঠাত্‍ কট্টরপন্থী জামাত ই ইসলামি ক্ষমতায় চলে আসতে পারে? সার্ভে যা বলছে... ঢাকায় জামাতের মিছিল -- এপি ফাইল ছবি
হাইলাইটস
  • জামাত ও বিএনপি- কোন দিকে পাল্লা ভারী?
  • পাকিস্তানপন্থী জামাতদের বিশ্বাস করতে পারছে না হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা
  • বাংলাদেশে জামাতের উত্থান কেন চিন্তার কারণ?

শেখ হাসিনার পতনেরই জন্য স্রেফ অপেক্ষাই করা হচ্ছিল। ২০২৪ সালের অগাস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পরেই যে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক দলটি একেবারে সামনে চলে আসে, সেটি হল খালেদা জিয়ার BNP (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। সেই বিএনপি, যারা আওয়ামী লিগ সরকারের আমলে প্রধান বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও ভোট বয়কটের পথে হেঁটেছিল। কিন্তু সময় যত গড়াল, চিত্রটা যেন ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করল। হাসিনা সরকারের পরে বিএনপি যে উদ্যোমে উঠে এসেছিল, সেখানে খানিকটা ফিকে ভাব। এবং তাত্‍পর্যপূর্ণভাবে কট্টরপন্থী সংগঠন জামাত ই ইসলামির বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। 

হাসিনার আমলে জামাতকে জঙ্গি সংগঠনের কমা দিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বাংলাদেশে। ইউনূস ক্ষমতায় বসেই জামাত ই ইসলামির নিষেধাজ্ঞা প্রথমে তুলে দিলেন, তারপরেই তাদের এগিয়ে নিয়ে এলেন। যার নির্যাস, ২০৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে যথেষ্ট সক্রিয় জামাত ই ইসলামি। একদা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এবার ভোটে লড়বে। তাও আবার বিএনপি-কে চ্যালেঞ্জ করে। এখন প্রশ্ন হল, বাংলাদেশে কি ২০২৬ সালের নির্বাচনে জিতে যেতে পারে পাকিস্তানের অন্যতম বন্ধু জামাত ই ইসলামি? 

জামাত ও বিএনপি- কোন দিকে পাল্লা ভারী?

এই নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট একটি সার্ভে করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩৩ শতাংশ মানুষ বলছে, তারা বিএনপি-কে চায়। ২৯ শতাংশের পছন্দে রয়েছে জামাত ই ইসলামি।  গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে সময়কালে করা এই সার্ভেতে এও দেখা গেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা (যারা তথাকথিত আন্দোলনকারী ছিল), তাদের রাজনৈতিক দল NCP (ন্যাশনাল সিটিজেন্স পার্টি)  ক্ষমতায় দেখতে চান মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ।  

গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটে ইসলামি ছাত্র শিবির (জামাত ই ইসলামির ছাত্র সংগঠন) জিতেছে। এখানেই শেষ নয়। জামাতদের ছাত্র সংগঠন জাহাঙ্গিরনগর, রাজশাহী ও চিট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও নির্বাচনে জয়ী। বাংলাদেশের বেশির ভাব বড় বিশ্ববিদ্যালয়েই এখন কট্টরপন্থী জামাতদের তাণ্ডব চলছে।  বাংলাদেশজুড়ে জামাতের সংগঠন এখন বেশ মজবুত। অনেক জায়গায় বিএনপি-র চেয়েও মজবুত। জামাত এখন কিছুটা ভোল বদলে আওয়ামী লিগের ভোটব্যাঙ্ককেও টার্গেট করেছে। এমনকী সংখ্যালঘু হিন্দুদেরও আস্থা জোগাড়ের চেষ্টা করছে।

Advertisement

শেখ হাসিনা ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের গতিবিধির উপর নজর রেখে ভীষণ সাবধানী কূটনৈতিক অবস্থান নিচ্ছে দিল্লি। নয়াদিল্লি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, বাংলাদেশে মানুষের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে, ভারত তা বজায় রাখবে। কিন্তু অঙ্কটা যতটা সহজ লাগছে, ততটাই কঠিন। জামাত ই ইসলামি একেবারে পাকিস্তান ভক্ত। পাকিস্তানের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। এমনকী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের উপর অত্যাচার করা পাকিস্তানি সেনাকে সাহায্যও করত। সেই সব একাধিক রাজাকারের ফাঁসি হয়েছে হাসিনার আমলে। সেই সব রাজকারদের উত্তসূরিরাই এখন বাংলাদেশে ক্ষমতায় বসার স্বপ্ন বুনছে। 

পাকিস্তানপন্থী জামাতদের বিশ্বাস করতে পারছে না হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ও জামাতের জোট ছিল। তখন খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লিগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। এখন দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে আলাদা। যে জামাত একদা বিএনপি-র জোটসঙ্গী ছিল, তারাই এখন প্রধান প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়ার দলের। ২০০১ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯৩টি পেয়েছিল বিএনপি, আওয়ামী লিগ পেয়েছিল ৬৬টি আসন। সে বারও লতিফুর রমানের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানেই ভোট হয়েছিল। 

হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া কিছুটা যেতে পারে বিএনপির দিকে। আবার সেই হাওয়ায় শরীর জুড়োতে ব্যস্ত এনসিপি-ও। এদিকে জামাত সদস্যরা বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে মানুষদের বোঝাচ্ছে, তারাই সব অত্যাচার থেকে উদ্ধার করবে। সেই তালিকায় হিন্দুরাও আছে। হিন্দুদের জামাত বোঝাচ্ছে, তারা ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা যাতে বাংলাদেশে শান্তিতে বাস করতে পারেন, তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু পাকিস্তানপন্থী জামাতদের বিশ্বাস করতে পারছে না হিন্দু সহ সংখ্যালঘুরা। আবার বিএনপি-র আমলের সেই অত্যাচারও সবার মনে আছে। ফলে দুদিকেই বিপদ। জলে বিএনপি, ডাঙায় জামাত! 

বাংলাদেশে জামাতের উত্থান কেন চিন্তার কারণ?

শেখ হাসিনার সরকারের শেষদিকে বাংলাদেশজুড়ে ভারত বিরোধী হাওয়া উঠতে শুরু করে দিয়েছিল। বিশেষ করে ২০২১ সালের পর থেকে। তখন থেকেই দেশটিতে দ্রুত বাড়তে শুরু করে পাকিস্তানপন্থী গোষ্ঠীর প্রভাব। এখন ইউনুস নেতৃত্বাধীন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে মৌলবাদী ও জঙ্গি-মনোভাবাপন্ন গোষ্ঠীগুলি খোলাখুলি মাথা তুলছে, আর তাদের কার্যকলাপে কোনও নিয়ন্ত্রণ কার্যত নেই। ২০০১ থেকে ২০০৬, এই সময়টায় বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকার ভারতের জন্য ভয়াবহ নিরাপত্তা সঙ্কট তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে তখন জঙ্গি সংগঠন ও ভারতবিরোধী উগ্রবাদী শক্তির নিরাপদ ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

২০০৪ সালে দশটি ট্রাক ভর্তি অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভারতের উদ্দেশ্যে পাঠানো হচ্ছিল। সেই ঘটনায় অভিযুক্ত হন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লতিফুজ্জামান বাবর। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার তাকে গ্রেফতার করে এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে ১০ বছরের জেল হয় তার। কিন্তু হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই, আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। ইতিহাস বলছে, জামাত ই ইসলামের ক্ষমতায় ফেরা মানেই সীমান্তে অস্থিরতা, জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেওয়া এবং উত্তর পূর্ব ভারতে সংঘাত বাড়ার ঝুঁকি।

POST A COMMENT
Advertisement