Bangladesh: ‘পুরো বাংলাদেশ কাঁপবে’, হাদিকে গুলির আগের রাতে গার্লফ্রেন্ডকে বলেছিল ফয়জল

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলি করার আগের রাতে ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের একটি রিসর্টে ছিলেন ফয়সাল। সেখানেই তিনি তাঁর বান্ধবী মারিয়া আখতার লিমাকে জানান, পরের দিন এমন একটি ঘটনা ঘটবে, যা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেবে। এমনকি হাদির একটি ভিডিও ক্লিপও তাকে দেখানো হয়েছিল বলে দাবি। পরদিনই ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দিনেদুপুরে মুখোশধারী বাইক আরোহীরা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একটি গুলি তাঁর কানের পাশ দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায়।

Advertisement
‘পুরো বাংলাদেশ কাঁপবে’, হাদিকে গুলির আগের রাতে গার্লফ্রেন্ডকে বলেছিল ফয়জল
হাইলাইটস
  • শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র হিংসা ও অরাজকতা।
  • সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতবিরোধী ও কট্টরপন্থী ছাত্রনেতা হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর শুরু হয়।

শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র হিংসা ও অরাজকতা। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতবিরোধী ও কট্টরপন্থী ছাত্রনেতা হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর শুরু হয়। সংবাদমাধ্যমের দফতর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও সামনে আসে।

এই আবহেই তদন্তে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থার দাবি, হাদিকে গুলি করার আগের রাতেই অভিযুক্ত শ্যুটার ফয়সাল করিম তার বান্ধবীকে বলেছিল, এমন কিছু ঘটতে চলেছে, যা 'পুরো বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেবে।'

ফের আগুন বাংলাদেশে।-ফাইল ছবি

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলি করার আগের রাতে ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারের একটি রিসর্টে ছিলেন ফয়সাল। সেখানেই তিনি তাঁর বান্ধবী মারিয়া আখতার লিমাকে জানান, পরের দিন এমন একটি ঘটনা ঘটবে, যা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেবে। এমনকি হাদির একটি ভিডিও ক্লিপও তাকে দেখানো হয়েছিল বলে দাবি। পরদিনই ঢাকার পুরনো পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে দিনেদুপুরে মুখোশধারী বাইক আরোহীরা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একটি গুলি তাঁর কানের পাশ দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায়।

আহত অবস্থায় হাদিকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তত্ত্বাবধানে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। তবে কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর শেষরক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।

সংবাদপত্রের দফতরেও তাণ্ডব, আগুন।-ফাইল ছবি

হাদির মৃত্যুর পর পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ কার্যত অশান্তির দিকে ঠেলে যায় বলে মত রাজনৈতিক মহলের। উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন শেখ হাসিনা-বিরোধী ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর মুখপাত্র এবং একজন কট্টর ভারতবিরোধী ছাত্রনেতা। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।

Advertisement

তদন্তকারী সংস্থাগুলির দাবি, হাদিকে হত্যার ঘটনাটি ছিল সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। অন্তত ২০ জন এই ঘটনায় বিভিন্ন ভূমিকায় যুক্ত ছিলেন, অর্থ জোগান, অস্ত্র সংগ্রহ, হামলার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে শ্যুটারদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা পর্যন্ত। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ইতিমধ্যেই ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ম্যাগাজিন এবং নগদ অর্থ।

র‍্যাব জানিয়েছে, ফয়সালের বোনের বাড়ির নিচ থেকে গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত দুটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া নরসিংদীর একটি পুকুর থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, একটি খেলনা পিস্তল ও ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে, যা এই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছিল বলে সন্দেহ।

তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ভুয়ো নম্বর প্লেট লাগানো ছিল। হামলার পর অভিযুক্তরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে। এমনকি নম্বর প্লেট বদলাতে অভিযুক্তের বাবার ভূমিকার কথাও সামনে এসেছে।

যদিও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, মূল শ্যুটাররা এখনও পলাতক। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল, তারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা ভারতে ঢুকেছে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও নেই। তা সত্ত্বেও ইউনূস প্রশাসন ভারতকে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

 

POST A COMMENT
Advertisement