সরস্বতী পুজোর পরদিনই অস্ত গিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। মঙ্গলবার চলে গেলেন বাংলার গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তার চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি। বাঙালি এখনও সেই শোক সামলে উঠতে পারেনি, তারমধ্যেই বুধবার সকালে সকলকে অবাক করে আচমকাই চলে গেলেন সঙ্গীত পরিচালক তথা গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী। দীর্ঘ রোগভোগের পর বুধবার সকালে মুম্বইয়ের এক হাসপাতালে প্রয়াত হন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
সত্তর-আশির দশকে বলিউডে একটার পর একটা সুপারহিট গানের স্রষ্টা ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। ২০২০ সালে ‘বাগি ৩’ ছবির ‘ভাঙ্গাস’ বাপ্পিদার কম্পোজ করা শেষ গান। । তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে।
মাত্র ১১ বছরে প্রথম গানে সুর
জীবনের ৬৯টা বসন্ত পার করে ছিলেন কিংবদন্তী গায়ক-কম্পোজার বাপ্পি লাহিড়ী। বাপ্পিদা মানেই যেন ডিস্কো কিং আর ঝলমলে গয়না। তবে তাঁর রঙিনে জীবনে ছিল সংগ্রামও। তিন বছর বয়সেই তবলা শেখা। ইচ্ছে ছিল মুম্বইয়ে পাড়ি দেওয়ার। ১৯ বছর বয়সে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। ১৯৭৩ সালে হিন্দী ভাষায় নির্মিত নানহা শিকারী ছবিতে তিনি প্রথম গান রচনা করেন। এরপর তাহির হুসেনের জখমী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজের মাধ্যমে সকলের নজরে আসেন।
বাপ্পিকে মুম্বইয়ে প্রথম ব্রেক দেন এক বাঙালি পরিচালকই। তিনি শমু মুখোপাধ্যায়। নানহা শিকারির পরিচালক ছিলেন শমু মুখোপাধ্যায়। যিনি আবার সম্পর্কে কাজলের বাবা, তনুজার স্বামী। ১৯৭৫-এ বাপ্পি পেয়ে যান জাখমি ছবির ব্রেক। বাপ্পির হিট হিসেবে প্রথম জাখমিকেই ধরা যেতে পারে। ওই ছবিরও প্রযোজক ছিলেন তাহির হুসেন। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুনীল দত্ত, আশা পারেখ, রাকেশ রোশন, রীনা রায় সহ অনেকে। পরিচালনায় ছিলেন রাজা ঠাকুর। কিশোর কুমারের হাস্কি গলায় জালতা হ্যায় জিয়া মেরে অথবা লতার গলায় বাপ্পির সুরে আভি আভি থি দুশমানি... আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
তাঁকে ডিস্কো কিং বলা হলেও রোম্যান্টিক গান থেকে শুরু করে ভজন, কাওয়ালি থেকে রাগাশ্রয়ী গান, সবেতেই ছিল বাপ্পির অনায়াসে যাতায়াত।
১৯৮৬ সালে গিনিশ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বাপ্পি লাহিড়ীর নাম ওঠে। ৩৩টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড করে।
তিনিই একমাত্র ভারতীয় মিউজিক ডিরেক্টর যিনি জোনাথন রসের লাইভ পারফরম্যান্সে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে।
তাঁর আইকনিক গান জিমি জিমি আজা আজা... হলিউড ছবি ' You Don't Mess With The Zohan's'-এ ব্যবহার করা হয়েছিল।
সাত এবং আটের দশকে হিন্দি ছায়াছবির দুনিয়ায় জনপ্রিয় নাম ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। ডিস্কো ডান্সার, চলতে চলতে, শরাবি-র মতো হিট হিন্দি ছবিতে গানে সুর দিয়েছেন তিনি। তেমনি বাংলায় অমর সঙ্গী, আমার তুমি, আশা ও ভালবাসা, অমর প্রেমের মতো হিট ছবির গানে সুর দিয়েছিলেন তিনি। বহু গান গেয়েছেন তিনি।
অমর সঙ্গীত, আশা ও ভালোবাসা, আমার তুমি, অমর প্রেম, মন্দিরা, বদনাম, রক্তলেখা, প্রিয়ার মতো বাংলা ছবিতে হিট গান দিয়েছিলেন তিনি ।
বাংলায় বাপ্পি লাহিড়ীর জনপ্রিয় গানগুলি হল
১.এ জীবনে পেয়েছি
২.জীবনের এত গুলো দিন
৩.ইমন বলো বসন্ত বলো
৪.ও শোনো পাখি
৫.আমার আজ জীবন মরন
৬.মঙ্গলদীপ জ্বেলে
৭.রামায়নে রামচন্দ্র
৮.বালিতে তোমার নাম
৯.তোমাকে লাগছে ভারী
১০.তুমি আমার সোনা
১১.মন্দ কিছু শোনো না
১২.তুমি আমার নয়ন গো
১৩.এ যে প্রেম প্রেম
১৪.হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
তিনি বাংলা ছবি দাদু (১৯৭২) তে প্রথম গান করার সুযোগ পান। তবে বাংলার থেকে বাপি জনপ্রিয় হয়েছিলেন হিন্দি গানেই, দে দে পেয়ার দে, ডিস্কো ডান্সারের মতো গান আজও কালজয়ী।
তিনি ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক জাদু দেখিয়েছিলেন। ভারদার্ত, ডিস্কো ড্যান্সার, দে দে পেয়ার দে, দিল্লি কি রাত, বোম্বে সে আয়া, রাত বাকি বাত বাকি, নামক হালাল, শারাবি, ডান্স ড্যান্স, কমান্ডো, সাহেব, গ্যাং লিডার, সাইলাবের জন্য আজও তাঁকে মনে রখেছেন সঙ্গীতপ্রেমীরা।