ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনীবলিউডের প্রবীণ অভিনেতা ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর এক সপ্তাহ কেটে গেল। গত ২৪ নভেম্বর চিরবিদায় নেন বলিউডের 'হি-ম্যান'। যদিও তিনি রয়ে গিয়েছেন তাঁর বিপুল সংখ্যক অনুরাগীদের মননে। ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সিনে দুনিয়ায়। তাঁর প্রয়াণ সংবাদ সঠিক না ভুয়ো তা নিয়ে দীর্ঘ সময় সকলের মনে প্রশ্ন ছিল। কিংবদন্তি অভিনেতার শেষকৃত্য তাড়াহুড়ো করে সম্পন্ন করা হয়েছিল। তাঁকে শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ না পেয়ে, ভক্তরা গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন। প্রায় সকলের মনেই একটা প্রশ্ন, কেন পরিবারের তরফে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? অবশেষে আসল কারণ জানালেন ধর্মেন্দ্র পত্নী- হেমা মালিনী।
ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর পরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর চলচ্চিত্র নির্মাতা হামাদ আল রায়মি দেখা করেন হেমা মালিনীর সঙ্গে। সেই সাক্ষাতের ছবি নিজের সোশ্যাল পেজে শেয়ার করেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনের অংশ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন। আরবি ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাতা লেখেন, "শোকের তৃতীয় দিনে, আমি প্রয়াত সুপারস্টার ধর্মেন্দ্রের স্ত্রী প্রখ্যাত শিল্পী হেমা মালিনীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এই প্রথমবার তাঁর সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হল। যদিও আমি তাঁকে এর আগে অনেকবার দূর থেকে দেখেছি। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন... একটি বেদনাদায়ক, হৃদয়বিদারক মুহূর্ত, এই শোক ভোলার নয়, যতই চেষ্টা করি না কেন। আমি হেমা মালিনীর সঙ্গে বসে কথা বলার সময়, ওঁর চোখে-মুখে একটা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দেখতে পেলাম, যা তিনি মরিয়া হয়ে লুকানোর চেষ্টা করছিলেন।"
হামাদ আল রায়মি আরও লেখেন, "তিনি (হেমা) আমায় কাঁপা গলায় বললেন, "দু'মাস আগে ধর্মেন্দ্রের সঙ্গে যদি তাঁর ফার্মহাউজে থাকতাম... আমি যদি তাঁকে সেখানে দেখতে পারতাম। তিনি আমায় বলেন, ধর্মেন্দ্রকে সব সময় জিজ্ঞাসা করতেন, 'তুমি কেন তোমার সুন্দর কবিতা এবং লেখা প্রকাশ করো না? তিনি উত্তর দিতেন, এখন না... আমাকে আগে কিছু কবিতা শেষ করতে দাও।' কিন্তু সময় তাঁকে আর তা করতে দিল না, তিনি চলে গেলেন...।"
চলচ্চিত্র নির্মাতা যোগ করেন, "তিনি (হেমা) আমাকে দুঃখের সঙ্গে বললেন, 'এখন অপরিচিতরা আসবে... তাঁরা ওঁর সম্পর্কে লিখবে, বই লিখবে... অথচ ওঁর কথা কখনও প্রকাশ পাবে না।" এর পর, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে, তিনি বললেন যে তাঁর অনুশোচনা যে, ধর্মেন্দ্রর ভক্তরা ওঁকে শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পায়নি।"
কেন এত তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল?
হামাদ আল রায়মি লেখেন "হেমা মালিনী আমায় মাতৃসুলভ সুরে বললেন, 'সারা জীবন ধর্মেন্দ্র কখনও চাননি যে কেউ ওঁকে দুর্বল বা অসুস্থ অবস্থায় দেখুক। নিকটতম আত্মীয়দের কাছ থেকেও নিজের ব্যথা- কষ্ট লুকিয়ে রাখতেন। একজন প্রয়াণের পর এটা তাঁর পরিবারের সিদ্ধান্ত।' তারপর তিনি থেমে, চোখের জল মুছে স্পষ্ট করে বললেন, "কিন্তু যা ঘটেছে তা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর... কারণ, হামাদ, তুমি ওঁকে এই অবস্থায় দেখতে পারতে না। ওঁর শেষ দিনগুলি খুব খারাপ... বেদনাদায়ক... এবং আমরাও ওঁকে ওই অবস্থায় দেখে সহ্য করতে পারিনি।"
চলচ্চিত্র নির্মাতা লেখেন, "আমি আমাদের কথোপকথন শেষ করে বললাম, 'যাই ঘটুক না কেন...ধর্মেন্দ্রর প্রতি আমার ভালোবাসা কখনোও বদলাবে না... এবং ওঁর স্মৃতি কখনও আমার জীবন থেকে মুছে যাবে না। ফেরার সময় কিছুটা লজ্জিত হয়েই আমি হেমা মালিনীকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাঁর সঙ্গে একটা ছবি তুলতে পারি কিনা। ওঁর সঙ্গে আমার কখনও ছবি তোলা হয়নি। ওঁর প্রতিক্রিয়া ছিল ধর্মেন্দ্রের মতোই... হাসি, সদয়তা এবং আন্তরিক স্বাগত। আমার চিরকালের নায়ক, কিংবদন্তি সুপারস্টার ধর্মেন্দ্র...।"
প্রসঙ্গত, মৃত্যুকালে হেমা মালিনীর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। সোমবার, ২৪ নভেম্বর মুম্বইতে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন কিংবদন্তি অভিনেতা। গত মাসের শুরুতেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। হিসেবে খ্যাত ধর্মেন্দ্র ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমে সকলের মন জয় করে গিয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ধর্মেন্দ্র। এমনকী হাসপাতালে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন তিনি। বেশ কিছুদিন আগেই তাঁর ভুয়ো মৃত্যু খবর নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১১ নভেম্বর রটে যায় তিনি প্রয়াত। এই খবরে অত্যন্ত বিরক্তি প্রকাশ করে তাঁর পরিবারের সদস্যরা। হেমা মালিনী, এষা দেওয়ালরা এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান তিনি ধর্মেন্দ্র বেঁচে আছেন। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।