২০২৩ সালে, জিয়া খান আত্মহত্যা মামলায় অভিনেতা সুরজ পাঞ্চোলিকে প্ররোচনার অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস করা হয়। ২০১৩ সালে মুম্বইয়ের জুহুর বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল জিয়াকে। সম্প্রতি, সুরজের মা, জরিনা ওয়াহাব এই মামলা নিয়ে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি দাবী করেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে দেখা করার আগে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন জিয়া।
এক সাক্ষাৎকারে জরিনা বলেন, "এর আগেও জিয়া ৪-৫ বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভাগ্য এমন যে, যখন আমার ছেলের সময়ই দুর্ঘটনাটা ঘটল।" মামলার প্রভাব সম্পর্কে জরিনা বলেন, "আমরা সবাই খারাপ সময় পার করেছি, কিন্তু আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, মিথ্যে দিয়ে কারও জীবন নষ্ট করলে সেটার ঋণ শোধ করতে হয়। এটা সুদ সহ ফেরত আসে। কর্মফল পেতেই হয়। আমরা অপেক্ষা করেছিলাম, কারণ সুরজ দোষী ছিল না। ১০ বছর সময় লেগেছে ঠিকই। কিন্তু ও এটা থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং আমি খুশি। এটি সুরজের ক্যারিয়ারেও প্রভাব ফেলেছে।"
কেরিয়ারের শীর্ষে আত্মহত্যা করেন জিয়া
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সেনসেশন হয়ে উঠেছিলেন জিয়া খান। ৩টি ছবিতে অভিনয় করে যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেন তিনি। বহু নায়িকা বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করেও এরকম সাফল্য পায় না অনেক ক্ষেত্রে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে 'নিশব্দ' ছবিতে বড় পর্দায় ডেবিউ হয়েছিল জিয়ার। এরপর 'হাউসফুল' ও 'গজনী'-তে অভিনয় করেন তিনি।
জিয়া খানের মৃত্যু
৩ জুন, ২০১৩ না ফেরার দেশে পাড়ি দেন জিয়া খান। ২৫ বছর বয়সী অভিনেত্রীর মৃত্যু খবর সামনে আসার পর থেকে, চলচ্চিত্র জগৎ থেকে শুরু করে অনুগামীরা হতবাক হয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় হয়েছিল সেসময়। সকলের মনে ঘুরছিল একটাই প্রশ্ন, কেন এই পদক্ষেপ নিলেন জিয়া।
সুরাজ পাঞ্চোলির সঙ্গে প্রেম
জিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর মা সুরজ পাঞ্চোলির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, জিয়ার মৃত্যুর জন্য সুরজ দায়ী। জিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন সুরজ। তিনিই জিয়াকে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করেছিলেন। যদিও সুরজ সব সময় নিজেকে নির্দোষ বলেন।
জিয়ার মৃত্যুর পর ৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি পায় পুলিশ। যেখানে তিনি তাঁর অবস্থা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি সুরজ পাঞ্চোলির সঙ্গে ডেটিং করছিলেন। কিন্তু এই সম্পর্ক তাঁকে সুখ কম আর কষ্ট দিয়েছে বেশি। অভিনেত্রীর চিঠির ভিত্তিতে পুলিশ সুরজ পাঞ্চোলিকেও গ্রেফতার করে। ২২ দিন হেফাজতে থাকার পরে তাঁকে বোম্বে হাইকোর্ট জামিন দেয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি অভিনেত্রীর মা। রাবিয়া আবারও আদালতে আবেদন করেন। মামলা যায় সিবিআইয়ের কাছে। রাবিয়া প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছেও সাহায্য চেয়েছিলেন। পরে ২০২৩ -র এপ্রিলে একটি বিশেষ সিবিআই আদালত, পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবের কারণে সুরজকে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।
চিঠিতে কী লিখেছিলেন জিয়া?
চিঠিতে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁর হারানোর কিছু নেই। তিনি অন্তর থেকে ভেঙ্গে গিয়েছেন। সে প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু যাকে ভালোবেসেছিলেন, তিনি তাঁকে প্রতিদিন কষ্ট দেন। তাঁর সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। জিয়া লিখেন যে, তিনি মনে করেন তিনি অন্তর থেকে মৃত। অভিনেত্রী বলেন যে, তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছে। জিয়া এক পৃষ্ঠায় লেখেন, "কষ্ট হচ্ছে, আপনি যাকে ভালোবাসেন, সে আপনাকে গালিগালাজ করে, হুমকি দেয় এবং প্রতারণা করে, অন্য মেয়েদের জন্য।"
সুরজ পাঞ্চোলি কে?
সুরজ, আদিত্য পাঞ্চোলি ও জরিনা ওয়াহাবের ছেলে। সুরজের দাদু রাজন পাঞ্চোলি ছিলেন একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। জিয়া খানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সুরজের। জিয়ার আত্মহত্যায় সুরজের নাম উঠতেই মানুষ তাঁকে বেশি করে চিনতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে 'হিরো' ছবির মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সুরজকে লঞ্চ করেছিলেন সলমন খান। অভিনেতার প্রথম ছবি ছিল ফ্লপ। এরপরে তিনি 'টাইম টু ড্যান্স', 'স্যাটেলাইট শঙ্কর'-এ কাজ করেন।