গত ১৪ এপ্রিল সকালে সলমন খানের মুম্বইয়ের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চলেছিল। মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে। কয়েক বছর আগে সলমন খানকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই। যে অপরাধীরা গুলি চালায় তারা বাইকে করে আসে। বলিউড অভিনেতার বাড়ির বাইরে কয়েক রাউন্ড গুলি করে, সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা। পরে মুম্বই পুলিশ এই অপরাধীদের ধরে ফেলে। পুলিশ, সলমনের বয়ান রেকর্ড করেছে। এবার সেই তথ্য হাতে এল আজতকের।
সলমন খানের বাড়িতে গুলি চালানোর মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ। যেখানে অভিনেতার বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিবৃতিতে সলমন জানিয়েছেন, বাড়িতে গুলি চালানোর সময় তিনি কোথায় ছিলেন এবং কী করছিলেন। গত ৪ জুন, মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের অ্যান্টি এক্সটর্শন সেল, অভিনেতার বক্তব্য রেকর্ড করে।
সলমন খানের বিবৃতি
মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সলমন খান বলেন, "আমি পেশায় একজন চলচ্চিত্র তারকা এবং গত ৩৫ বছর ধরে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। অনেক সময়ে, বান্দ্রার ব্যান্ডস্ট্যান্ডের কাছে আমার বাড়ির গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং অনুগামীদের ভিড় জমে। তাঁদের প্রতি আমার ভালোবাসা জানাতে আমি আমার ফ্ল্যাটের দোতলার বারান্দা থেকে হাত নাড়ি। এছাড়াও, আমার বাড়িতে পার্টি হলে, বন্ধু- বান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা, আমার বাবা আসেন। সেসময় আমি তাঁদের সঙ্গে বারান্দায় সময় কাটাই। কাজ শেষে বা খুব ভোরে, আমি কিছু সতেজ হাওয়া খেতে বারান্দায় যাই। আমি নিজের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও রেখেছি।"
বলিউড সুপারস্টার আরও বলেন, "২০২২ সালে, আমার বাবা বান্দ্রা থানায় একটি অভিযোগ করেছিলেন। আমার বাবা আমাকে এবং আমার পরিবারের জন্য একটি হুমকি চিঠি পেয়েছেন। এই চিঠিটি আমার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের অপর পাশের বেঞ্চে রাখা ছিল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে, আমি আমার অফিসিয়াল ইমেল আইডিতে আমার টিমের একজন কর্মচারীর কাছ থেকে একটি মেইল পেয়েছি। যেখানে লরেন্স বিষ্ণোই আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দেয়। আমার টিম এই বিষয়ে বান্দ্রা থানায় অভিযোগ করেছে।"
বলিউডের ভাইজানের যোগ করেন, "এবছরের জানুয়ারিতে, দুই ব্যক্তি ভুয়ো নাম ও পরিচয়পত্র নিয়ে পানভেলে আমার ফার্মহাউজে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। পানভেল তালুকা পুলিশ ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করে। আমি পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, যে দুই অপরাধী আমার ফার্মহাউজে ঢোকার চেষ্টা করেছিল, তারা রাজস্থানের ফাজিলকা গ্রামের বাসিন্দা, যেটি লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্রাম। আমি আমার সঙ্গে থাকা সবাইকে, আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্যদের সব সময় সতর্ক থাকতে বলেছি। মুম্বই পুলিশ আমাকে ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দিয়েছে। আমার নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত পুলিশ, দেহরক্ষী, প্রাইভেট সিকিউরিটি বডিগার্ডরা আমার সঙ্গে আছে।"
বিবৃতিতে আরও লেখা আছে, "১৪ এপ্রিল ২০২৪, যখন আতশবাজির শব্দ শোনা যায়, তখন আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভোর ৪.৫৫ মিনিট নাগাদ পুলিশ দেহরক্ষী আমায় জানায় যে, একটি বাইক করে দু'জন লোক গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের প্রথম তলার বারান্দায় বন্দুক থেকে গুলি চালিয়েছে। এর আগেও আমাকে ও আমার পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি যে, লরেন্স বিষ্ণোই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই হামলার দায় নিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি লরেন্স বিষ্ণোইয়ের টিম আমার বারান্দায় গুলি চালিয়েছে।"
সলমন বলেন, "আমার দেহরক্ষী এই হামলার বিষয়ে ১৪ এপ্রিল বান্দ্রা থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। আমি আরও জানতে পেরেছি যে, লরেন্স বিষ্ণোই এবং তার ভাই আনমোল বিষ্ণোই, একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এই হামলার দায় নিয়েছেন। এর আগে লরেন্স বিষ্ণোই এবং তার টিম একটি সাক্ষাৎকারে আমায় ও আমার পরিবারকে হত্যার কথা বলেছিল। তাই আমি বিশ্বাস করি যে, লরেন্স বিষ্ণোই ও তার গ্যাং, আমার পরিবারের সদস্যরা যখন ঘুমাচ্ছিল তখন এই গুলি চালায়। তার পরিকল্পনা ছিল আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার, যার জন্য সে এই হামলা করেছে।' এই বিবৃতিতে সই করেছেন সলমন খান।