'প্রহ্লাদচা একগো বাত কহে? অভিষেক স্যর আজকাল বহুত খুশি খুশি রহেতে হ্যায়...' ট্যাঙ্কের উপরে বসে চা খেয়ে খোশ মেজাজে থাকা সচিব অভিষেক ত্রিপাঠী (জিতেন্দ্র কুমার) ( বিকাশ (চন্দন রায়) ও প্রহ্লাদ (ফয়জল মালিক)-এর কথোপকথনে শুরুতেই দর্শকদের মনে যে চিন্তাটি প্রথমেই এসে যাবে, তার মানে পঞ্চায়েত সচিব ও পঞ্চায়েত প্রধানের মেয়ে রিঙ্কির মধ্যে প্রেম জমে গিয়েছে। অতএব Amazon Prime-এর জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ পঞ্চায়েত সিজন ২ (Panchayat Season 2)-এর মূল বিষয় সচিব ও প্রধানজির মেয়ে রিঙ্কির প্রেম। তা হলে আপনি ভুল করবেন। এপিসোড যত এগোতে থাকে, গল্পের মোড় বিভিন্ন বাঁক নিতে শুরু করে।
প্রতিটি চরিত্রই যেন আস্ত একটি গল্প
প্রথমেই জানিয়ে রাখা ভাল, Panchayat Season 1-এর মতো আপাদমস্তক 'ফিল গুড' কিন্তু Panchayat Season 2 নয়। ছবির দাবিতেই এই সিরিজে রয়েছে গালিগালাজ, রয়েছে মৃত্যু, হিংসা। কিন্তু দিনের শেষে ভারতের একটি গ্রামের পরিবেশ, সমাজ, চিন্তাধারা, অর্থনীতি, রাজনীতি, জীবনযাপনের অসাধারণ চিত্রই ফুটে উঠেছে Panchayat Season 2-তে। প্রতিটি চরিত্রকে মনে রাখার মতো। প্রতিটি চরিত্রের অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করে।
'আমার ছাগল হারিয়ে গিয়েছে, CCTV দেখে খুঁজে দিন'
যেমন, একটি সিনে আছে, ফুলেরা গ্রামে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে। সেই সিসিটিভি দেখে গ্রামের মানুষ এতটাই উচ্ছ্বসিত, একজন সোজা পঞ্চায়েত অফিসে হাজির। তাঁর দাবি, ছাগলটা হারিয়ে গেছে। সিসিটিভি ফুটেজে গোটা গ্রামে তিনি খুঁজবেন। এই দৃশ্যটি ভীষণ হাসির। একইসঙ্গে এই সার্কাজিমের আড়ালে রয়েছে এক নির্মম সত্য। তা হল, ভারতের গ্রামে খেটে খাওয়া মানুষের কাছে পেটের দায়-ই আসল। বাকি সব তুচ্ছ।
ব্রিজভূষণ এখনও প্রক্সি পঞ্চায়েত প্রধান
অভিষেক ত্রিপাঠী, ফুলেরার পঞ্চায়েত সচিব চেষ্টা করছেন, কীভাবে CAT স্কোর করে মোটা মাইনের চাকরি নিয়ে গ্রাম ছাড়বেন। কিন্তু ফুলেরা কি সত্যিই অভিষেক ছাড়তে পারবেন? বা বলা ভাল. ফুলেরার পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, বিকাশ, রিঙ্কি, মঞ্জু দেবী সহ বাকিরা কি তাঁদের প্রিয় সচিবজিকে ছাড়বেন? ফলে অভিষেক যতই পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করুন, একের পর এক ঘটনায় তিনি গ্রামের সঙ্গেই ওতোপ্রত ভাবেই যেন জড়িয়ে পড়ছেন। বলে রাখি, ফুলেরা গ্রামে কিন্তু ব্রিজভূষণ দুবে-ই পঞ্চায়েত প্রধানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও। মঞ্জু দেবী নামেই পঞ্চায়েত প্রধান। ডিএম-এর ধমক খেয়েও শুধরে যাননি। এদিকে অভিষেক বন্ধু সিদ্ধার্থ দেড় কোটি টাকা প্যাকেজের চাকরি পেয়ে আমেরিকা থেকে চলে এসেছেন নয়ডাতে। সেই শুনে অবসাদ আরও বাড়ল অভিষেকের।
বনরাক্ষস
সিজন ১-এর সেই লোকটিকে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে, বাবাসির স্লোগান নিয়ে চূড়ান্ত অশান্তি করেছিল। সেই ভূষণ সিজন ২-এ পরের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড়ানোর ছক কষছে। তাই পঞ্চায়েত অফিসের নানা ভুল ধরতে এক পা তুলেই আছে। এদিকে সচিব অভিষেকের সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধানের পরিবারের খুব দোস্তি। ব্যস, ভূষণ টার্গেট করেছে সচিবকে। তার অভিযোগ, সচিবজি তেল মারছে প্রধানের পরিবারকে। এহেন ভূষণকে আড়ালে গ্রামের একাংশ বনরাক্ষস বলে ডাকে। যার বাংলা হল, জঙ্গলের রাক্ষস।
MLA বনাম ফুলেরা
ফুলেরা গ্রামের রাস্তা উন্নয়নের জন্য টাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে এলাকার বিধায়কের সঙ্গে প্রধান, উপপ্রধান ও বিকাশের সরাসরি বাকবিতণ্ডায় আশ্চর্যজনক ভাবেই জড়িয়ে যায় অভিষেক ত্রিপাঠী। বিধায়কের যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ে সচিবের উপরেই। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় বলতেই হয়, সচিবের উপরে বিধায়কের যে রাগটা দেখানো হয়েছে, সেটা যেন খানিক বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। জোর করে একটি সংঘাতের চিত্রনাট্য তৈরির ভূমিকা।
ফয়জল মালিকের অসাধারণ অভিনয়
ফুলেরার পঞ্চায়েত উপপ্রধান পহ্লাদ পান্ডে (ফয়জল মালিক) এক কথায় আউটস্ট্যান্ডিং। ভীষণ সুখের একটি মুহূর্ত থেকে হঠাত্ দুঃখের মুহূর্তে পরক্ষণে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলার অভিনয় এককথায়ফয়, হ্যাটস অফ। বিয়ার পার্টিতে হাসিঠাট্টার মধ্যে ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে ফয়জলের অভিব্যক্তি, আবার ছেলের মৃত্যু শোকের আবহে তিন দিন নিজেকে ঘরবন্দি রাখার পর প্রধানের কথাতে বেরিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠার ওই অন্যবদ্য অভিনয়, গায়ে কাঁটা দেয়। চোখে জল আনে।
Panchayat Season 1 দেখে যদি আপনি ফুলেরা গ্রামকে মন দিয়ে ফেলেন, তা হলে Season 2 অবশ্যই দেখতে পারেন। তবে কবিকে ধার করে বলতে হয় 'শেষ হয়েও হইল না শেষ'। সিজন ৩-এর আশা জিইয়েই রাখল।