
গত রবিবার দুপুর থেকে টেলি অভিনেত্রী পল্লবী দের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় চলছে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে এখনও নানা ধোঁয়াশা রয়েছে। জেরা এবং তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গড়ফার ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় পল্লবীর দেহ। পল্লবীর পরিবার দাবি করছে, অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগের আঙুল উঠেছে পল্লবীর প্রেমিক সাগ্নিক চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। কিন্তু পল্লবীর মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তিনি আত্মহত্যাই করেছেন। তাঁর দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রাণবন্ত একটা মে কেন হঠাৎ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পল্লবীর এই রহস্য মৃত্যু ফের তাজা করে দিচ্ছে কয়েকবছর আগে অভিনেত্রী দিশা গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিকেও। পল্লবীর মত দিশার দেহও পাওয়া গিয়েছিল ঝুলন্ত অবস্থায়। সেই ঘটনার পর সাত বছর কেটে গেলেও আজও অজানা দিশা গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু রহস্য।
দিশা গঙ্গোপাধ্যায়ের দেহও উদ্ধার হয় ফ্ল্যাট থেকে
সালটা ২০১৫, তখন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ ছিলেন দিশা গঙ্গোপাধ্যায়। এক জনপ্রিয় অভিনেত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হয়েছিল সেই সময়ে৷ ৯ এপ্রিল পর্ণশ্রীর বনমালী নস্কর রোডের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে উদ্ধার করা দিশা গঙ্গোপাধ্যায়ের ঝুলন্ত দেহ৷ তখন অভিনেত্রীর বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর। সেদিন সকালে বারবার ফোন-মেসেজ করেও কোনও সাড়া পাননি তাঁর প্রেমিক বিবস্বান ঘোষ। যিনি বাংলা সিরিয়াল জগতে ভিভান নামেই পরিচিতি। ভিভান সোজা ফ্ল্যাটে চলে আসেন৷ দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় দিশার দেহ৷ বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয় দিশাকে৷ অভিনেত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন বলেই সাক্ষ্য প্রমাণের মানদণ্ডে ধারণ করা হয়৷ তবে সেই মৃত্যুর কারণ আজও পরিষ্কার নয়৷
সম্পর্কের টানাপোড়েনেই মৃত্যু দিশার?
জি বাংলায় কৃষ্ণকলি ধারাবাহিকে খল চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ভিভান। টলি পাড়ায় বেশ পরিচিতি নাম ভিভান। দিশা এবং ভিভান সেই সময়ে একে অপরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। খুব তাড়াতাড়ি তারা বিয়েও করবেন এমনই শোনা যাচ্ছিল। পর্ণশ্রীর ওই ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থাকতেন দিশা৷ তাঁর বাবা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে কর্মরত ছিলেন৷ মাঝে মধ্যে তিনি কলকাতায় আসতেন৷ মৃত্যুর আগের রাতে ভিভানের সঙ্গেই ইডেনে আইপিএলের ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন দিশা৷ রাতে তাঁকে বেলেঘাটায় নিজের বাড়িতে নিয়ে যান ভিভান৷ সেখানে খাওয়াদাওয়ার পর বেশি রাতে ভিভানই তাঁকে পর্ণশ্রীতে ছেড়ে দিয়ে যান৷ রাতে বাড়ি ফিরে দিশা ফোন করেন ভিভানকে৷ তাঁকে নিয়ে অভিনেতার পরিজনের প্রতিক্রিয়া জানতে চান৷ বৃহস্পতিবার সকালে এ নিয়ে কথা বলবেন বলে তাঁকে জানান ভিভান৷ এদিকে দিশার আত্মহত্যার পরেই ঘটেছিল আরেকটি চমকপ্রদ ঘটনা। যেদিন দিশা আত্মহত্যা করেছিলেন সেদিন আরো একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায় । দিশার মৃত্যুর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হাওড়া রেল লাইনের পাশ থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। সেই তরুণী আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলেন, পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাবা মায়ের হাতে তুলে দেয়।পরে জানা যায় এই তরুণী সুচন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দিশার পূর্বপরিচিত।
এক সিরিয়ালে অভিনয় করতেন দিশা ও সুচন্দ্রা
সিরিয়ালে অভিনয় করতে গিয়েই দিশার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সুচন্দ্রার। অনেকের মতে সেখান থেকেই দুজনের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তার থেকেই শুরু হয় টানাপোড়েন। তাতেই কি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন বাঙলা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ অভিনেত্রী দিশা গঙ্গোপাধ্যায়। সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। কারণ দিশার মৃত্যুর খবর শুনেই ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বন্ধু সুচন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিশা মারা গেলেও বেঁচে যান সুচন্দ্রা। 'তুমি আসবে বলে' সিরিয়ালে একসঙ্গে অভিনয় করতেন দিশা ও সুচন্দ্রা। শোনা যায় সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা থেকে দুজনে থাকতেও শুরু করেন একসঙ্গে। কিন্তু দিশার পরিবার মেনে নিতে পারেনি এই সম্পর্ক। ২০১৭ সালে বান্ধবী পৃথা মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন ভিভান। পৃথার টেলিভিশনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। বর্তমানে সুখেই দাম্পত্য চলছে তাঁদের। কিন্তু ঠিক কী কারণে স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা দিশাকে মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ঝড়ে পড়তে হল তা নিয়ে আজও রহস্য রয়ে গেছে।